**ইংরেজ ও তাদের দোসর জমিদারদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী বীর সন্তান সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরী, আশু আকন্দ, হায়াত মাহমুদ, আইনউদ্দিন সিকদার, বলখী শাহ, গগন মিয়া ও মোহন মিয়ার নাম ঐতিহাসিক স্মৃতিগাঁথা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে**
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বেঈমান সেনাপতির ষড়যন্ত্রে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ দৌলার করুণ পরাজয় জাতীয় ইতিহাসে এক লজ্জার অধ্যায়। সেই লজ্জা শুধু বেঈমান সেনাপতিকে মীর জাফর আলী খানকে নিয়েই নয়। বলা হয়ে থাকে, ক্লাইভের বাহিনী যখন বিজয়ী বেশে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাচ্ছিল তখন যে পরিমাণ বাঙালি রাস্তার দু’পাশে তাদেরকে দেখছিল তারা যদি একটি করে ঢিল নিক্ষেপ করতো তা হলেও সেই ঢিলের আঘাতে ক্লাইভ বাহিনী নিপাত হয়ে যেত।
এ বাক্যটির মধ্যেও রয়েছে বাঙালি জাতির প্রতি এক ধরনের ধিক্কার। তারা বিপদের মুখে একত্রিত হতে জানে না, প্রতিরোধ করতে জানে না। তারা বিপদের সময় ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে শুধু নিজেদের বিভাজিত করতে জানে। বাঙালি জাতির এই একত্রিত হতে না পারার অপবাদ এবং প্রতিরোধের স্পৃহা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতে না পারার অপবাদ মিথ্যে প্রমাণ করেছিল ১৭৫৭ সালের কয়েক বছর পরে বরিশালের কয়েকজন অগ্নিপুরুষ। তাদের আত্মত্যাগের ধারায় অনুপ্রাণিত বরিশালের বীর সন্তানরা ইংরেজ শাসনের দীর্ঘ সময় জুড়ে ইংরেজ শাসন ও তাদের তাবেদার জমিদারদের শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ স্বাধীন দেশে সেই আত্মত্যাগী বীরপুরুষরা আমাদের মাঝ থেকে প্রায় বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছেন।
ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত সেই সব বীরপুরুষদের মধ্যে প্রথমেই স্মরণ করতে হয় গৌরনদীর নলচিড়ার অধিবাসী সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরীকে। নলচিড়ার জমিদার পরিবার হিসেবেখ্যাত মিয়া পরিবারের অন্যতম আদি পুরুষ সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন বরিশাল অঞ্চলে ইংরেজ বিরোধী যুদ্ধের এক ঐতিহাসিক বীরপুরুষ। তিনি ইংরেজ অধীনতাকে অস্বীকার করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৭৭৯ সালে যে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তা এখনো শরিকলের যুদ্ধ নামেখ্যাত।
সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরীর পূর্ব পুরুষ ছিলেন উলফৎ গাজী। উলফৎ গাজী ছিলেন স¤্রাট জাহাঙ্গীরের বিশ্বাসভাজন সেই ব্যক্তি যাকে স¤্রাট জাহাঙ্গীর সন্তুষ্ট হয়ে চন্দ্রদ্বীপ থেকে সৃষ্ট নাজিরপুর পরগনা প্রদান করেছিলেন। সৈয়দ উলফৎ গাজীর পুত্র সৈয়দজান, তার পুত্র আইনউদ্দীন, তার পুত্র শামসুদ্দীন, তার পুত্র হোসেন উদ্দীন এবং তার পুত্র ইমামউদ্দিন।
পলাশী যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার একদল সৈন্য বরিশালের নাজিরপুর পরগণায় আশ্রয় নেয়। নাজিরপুর পরগণার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরীর প্রেরণায় পলাশীর সৈন্যরা গৌরনদীর শরিকলে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। সৈয়দ ইমামউদ্দিন ইংরেজ কোম্পানির শাসনকে অস্বীকার করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেন। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের নির্দেশে ঢাকার এটর্নি পিট ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে ইমামউদ্দিনকে বন্দি করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য মিস্টার রোজ সৈয়দ ইমামউদ্দিনের মুক্তির জন্য হেস্টিংসের কাছে আবেদন জানায়। মুক্তি পেয়ে ইমামউদ্দিন যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
তিনি বাড়ির চারদিকে পরিখা খনন করেন এবং সশস্ত্র কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেন। ইংরেজ সরকার ইমামউদ্দিনের বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে একদল সিপাহী প্রেরণ করে এবং তারা শরিকল দুর্গ আক্রমণ করে। এক তীব্র সংঘর্ষের পর শরিকল দুর্গের পতন হয়। অতঃপর ইংরেজ সিপাহীরা সৈয়দ ইমামউদ্দিনের নলচিড়ার খানাবাড়ি আক্রমণ করে। কামানের গোলার আঘাতে বাড়ির ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। কামানের গোলার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেয়াল খানাবাড়িতে এখনও রয়েছে। নলচিড়া মিয়া বাড়িতে কয়েকটি কামান ছিল। পরাজয়ের পর কয়েকটি কামান দীঘিতে ফেলে দেয়া হয়। ইমামউদ্দিন তার সীমিত জনবল নিয়ে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তা বরিশাল তথা বাংলার জনগণের জন্য এক গৌরবের ইতিহাস।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচারকে রুখে দাঁড়াতে জেগেছিলেন বরিশালের আরেক সন্তান হায়াত মাহমুদ। বরিশাল শহর থেকে অদূরে কড়াপুর নিবাসী হায়াত মাহমুদ চন্দ্রদ্বীপ ও বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার একজন জমিদার ছিলেন। একইসাথে ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহে তিনি বরিশালের এক বীর সন্তান ছিলেন।
মালদার খাঁ ও তার পুত্র হায়াত মাহমুদ চন্দ্রদ্বীপ রাজার সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। কথিত রয়েছে-একবার চন্দ্রদ্বীপ রাজাকে বন্দি করা হয়। চন্দ্রদ্বীপ রাজাকে চাখারের মজমুদার ও মীর পরিবার বন্দি করে নিয়ে যায়। হায়াত মাহমুদ রাতের অন্ধকারে রাজাকে মুক্ত করে আনেন। রাজা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দুটি তালুক প্রদান করেন। এই জমিদারি সত্বেও হায়াত মাহমুদ তার বাহিনী নিয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং বরিশালের নদীপথে কোম্পানির লোকজনের যাতায়াত প্রায় বন্ধ করে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই ইংরেজ কোম্পানি তাকে ডাকাত সর্দার আখ্যা দিয়েছিলো। কোম্পানির সিপাহীরা তাকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রেফতার করে। ঢাকার নায়েব নাজিম হায়াত মাহমুদকে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস বিদ্রোহী যোদ্ধা হায়াত মাহমুদকে প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসন দেয় এবং তার জমিদারি কেড়ে নেয়। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুক্তিলাভ করে কড়াপুরে ফিরে আসতে সমর্থ হয়েছিলেন।
জমিদার ও কোম্পানির রাজস্ব কর্মচারীদের অত্যাচার হতে বাঁচার অভিপ্রায়ে দক্ষিণ বঙ্গের কৃষকরা প্রথম জেগে উঠেছিল যার নেতৃত্বে তার নাম আইনউদ্দিন সিকদার। আইনউদ্দিন সিকদার বাকেরগঞ্জ থানার নেয়ামতি গ্রামে বাস করতেন। বুজুর্গ উমেদপুর পরগনায় তার ছোট তালুকদারি ছিলো। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাকেরগঞ্জে এক ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। ওইবছরের প্লাবনে একদিকে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়, অন্যদিকে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। খাজনার ভয়ে শত শত লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে সুন্দরবনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবু কোম্পানির কর্মচারী ও গোমস্তারা কৃষকদের ওপর নিপীড়ন চালায়। কৃষকরা জমিদার ও কোম্পানির রাজস্ব কর্মচারীদের অত্যাচার হতে বাঁচার জন্য অস্ত্র ধারণ করে। নিজে তালুকদার হওয়া সত্বেও আইনউদ্দিন সিকদার বিদ্রোহী কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন। আইনউদ্দিন সিকদার তার বাহিনী নিয়ে ইংরেজ বণিক ও গোমস্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সরকার আইনউদ্দিন সিকদারকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে রাতের অন্ধকারে তার বাড়ি আক্রমণ করে তাকে বন্দি করে। গ্রেফতারের পর আইনউদ্দিন সিকদারের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কথিত রয়েছে-কোম্পানির সিপাহীরা আইনউদ্দিন সিকদারকে হত্যা করে লাশ বিষখালী নদীতে ফেলে দিয়েছে। তবে মিস্টার বেভারিজ বলেছিলেন, তাকে নির্বাসনে দেয়া হয়েছিলো।
ইংরেজ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতার দৃপ্ত বাণী দক্ষিণ বঙ্গে যারা উচ্চারণ করেছেন তাদের মধ্যে প্রথমজন বলখী শাহ। উচ্চারণ অপভ্রংশে তার নামটি বিভিন্ন গ্রন্থে বোলাকি শাহ, বালকী শাহ, বুলাকী শাহ ইত্যাদি রূপে লিখিত হয়েছে। বলখী শাহের জন্ম হয়েছিল পিরোজপুরের এক কৃষক পরিবারে। তিনি সলিমাবাদ পরগনার বখারী মৌজার একজন সুফি ছিলেন। ১৭৯২ সালে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাখরগঞ্জের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার গুরু জনৈক জিওনকে বাখরগঞ্জের সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় বসান। ১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষজনিত দুঃখ-দুর্দশা এবং ১৭৮৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বাখরগঞ্জবাসীদের অবস্থা শোচনীয় করে তুলেছিল। এ অবস্থার মধ্যে জমিদার ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার ও অন্যায় দাবি রায়তদের করুণ অবস্থা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বলখী শাহ বাখরগঞ্জের কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেন ইংরেজ বণিক ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার লক্ষ্যে। বলখী শাহের কার্যক্রমের দ্বিবিধ উদ্দেশ্য ছিল। একদিকে তিনি বাখরগঞ্জ থেকে ইংরেজ শক্তি উৎখাতের প্রচেষ্টা চালান, অন্যদিকে রায়তদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। এ সকল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের নিরিখে তিনি ১৭৯২ সালের কৃষক বিদ্রোহের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত এমন হাজার হাজার সশস্ত্র লোক জোগাড়ের পর তিনি ঘোষণা দেন যে, ফিরিঙ্গি রাজত্ব শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া তিনি সলিমাবাদ, নাজিরপুর ও চন্দ্রদ্বীপ পরগনার জমিদারদের ব্রিটিশ আনুগত্য পরিহার, কর প্রদান বন্ধ এবং তার নেতৃত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য করেন।
স্বাধীনতা ঘোষণা করে তার গুরু জনৈক জিওনকে বাখরগঞ্জের সুলতান হিসেবে তিনি ক্ষমতায় বসান এবং স্বাধীন দক্ষিণ বঙ্গের জন্য কতিপয় ঘোষণা জারি করেন। উক্ত ঘোষণায় রায়তদের জন্য বলখী শাহ ভূমি কর নির্দিষ্ট করেন এবং প্রচলিত কর ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেন। তিনি জমিদারদের প্রতিকানিতে (১২০ শতক) দুই টাকার বেশি কর আরোপ না করার এবং ইতিপূর্বে তার বেশি কর আদায় হয়ে থাকলে তা অনতিবিলম্বে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। এতে কোনো রকমের ব্যতিক্রম ঘটলে তাদেরকে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেন।
সুফী ও চাষি বলখী শাহ সুগন্ধিয়ার গ্রামাঞ্চলের চাষিদের সাহায্যে একটি ক্ষুদ্র দুর্গ তৈরি করে চাষিদের নিয়ে রীতিমতো সৈন্যদল গড়ে তুলেছিলেন। নলছিটির কাছে শাহ সুজাবাদে মোগলবাহিনীর পরিত্যক্ত সাতটি কামান ওই দুর্গে এনে কারিগরদের সাহায্যে ওইগুলোকে কাজের উপযোগী করে নেন। ওই দুর্গে একটি কামারশালা ও গোলাবারুদ তৈরির কারখানা পর্যন্ত তিনি নির্মাণ করেন। কামারশালায় বল্লম ও তরবারি তৈরি হতো। আয়োজন সমাপ্ত করে তিনি অত্যাচারী ইংরেজ সরকার ও জমিদারগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহের আয়োজন করেন। দুর্ভিক্ষপীড়িত কৃষকরা এবং সুজাবাদ ও ইন্দ্রপাশা দুর্গের অনেক সৈন্য বলখী শাহের পতাকাতলে আশ্রয় নেয়। ১৭৯২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির এক পত্রে ইংরেজ কালেক্টর বলখী শাহরে বিদ্রোহের বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণনায় দেখা যায় বলখী শাহের সুগন্ধার দুর্গে সাতটি কামান ও ১২টি মাস্কেট বন্দুক ছিল। সর্বদা বন্দুকধারী সৈন্য দুর্গ পাহারা দিতো। কয়েকজন সর্বদা গোলাবারুদ তৈরি করতো।
বলখী শাহর বিরুদ্ধে প্রথম লড়াইয়ে নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বরকন্দাজরা। বলখী শাহের লোকেরা প্রথমদিকের সবগুলো যুদ্ধে কোম্পানির বরকন্দাজদের হটিয়ে দেন। কোম্পানি এ অবস্থায় ইউরোপীয় কর্মকর্তার অধীনে শক্তিশালী সিপাহী বাহিনী পাঠায়। তারা বলখী শাহের মাটির দুর্গ ধ্বংস করে এবং বলখী শাহকে বন্দি করে নেয়। ঢাকার নিজামত আদালত বিদ্রোহ করা এবং রক্তপাত ঘটানোর জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদন্ড দেয়।
দক্ষিণ বঙ্গের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জমিদারদের করের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে তিনি যে শাসন ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন তা বিবেচনা করে বলা যায় বলখী শাহ ছিলেন দক্ষিণ বঙ্গের এক তিতুমির। যদিও দুঃখজনকভাবে বলখী শাহকে এই বঙ্গে তিতুমিরের মতো কেউ স্মরণ করছেন না।
ইংরেজ আমলের বিদ্রোহগুলো সবক্ষেত্রে সরাসরি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে হতোনা। বিশেষ করে কৃষকদের বিদ্রোহগুলো বেশিরভাগই হতো ইংরেজদের দোসর ও তাবেদার জমিদার শ্রেণির প্রতি। তাই এ কথা যৌক্তিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, জমিদারদের বিরুদ্ধে সৃষ্ট বিদ্রোহগুলোরও প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ইংরেজ সরকার। প্রত্যক্ষভাবে জমিদারদের বিরুদ্ধে এবং পরোক্ষে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে সৃষ্ট বরিশালের মাটিতে এমন বিদ্রোহসমূহ যাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে অবশ্যই স্মরণ করতে হয় মঠবাড়িয়ার দুই ভাই গগন মিয়া ও মোহন মিয়াকে। মঠবাড়িয়া ও ভান্ডারিয়া নিয়ে গঠিত সৈয়দপুর পরগণার এক তালুকদার গগন মিয়া ও তার ভাই মোহন মিয়া জমিদার বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের নেতৃত্ব দিয়ে ইংরেজ শক্তির সম্মুখে ত্রাস রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
সৈয়দপুর পরগণার দশ আনার মালিক ছিল ঢাকার মিত্রজিত সিং এবং দু’আনার মালিক ছিলো বিরজা রতন দাস। ফরিদপুর জোর গেরদা নিবাসী শেখ দৌলত মিত্রজিতদের অধীনে তালুক লাভ করে ভান্ডারিয়ার সিংখালী গ্রামে জঙ্গল আবাদ করে বসতি স্থাপন করেন। শেখ দৌলতের পুত্র শেখ গগন মিয়া ও মোহন মিয়া। খালের পশ্চিম পাড়ে গগন ও পূর্ব পাড়ে মোহন ১৭ হাত পরিখা খনন করে ৪০ একর ভূমির ওপর বসতবাড়ী নির্মাণ করেছিলেন। গগন ও মোহন অনেক কৃষক পরিবারকে নিয়ে সুন্দরবন আবাদ করেছিলেন। কিন্তু মিত্রজিত গগন, মোহন ও কৃষকদের নামে ভূমি কবলিয়াত দিতে অস্বীকার করলেন। তখন গগন ও মোহনের নির্দেশে কৃষকরা মিত্রজিতদের খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেয়। মিত্রজিত তখন তার তালুক মদন ঘোষকে বন্দোবস্ত দেয়। গগন ও মোহন মদন ঘোষের লম্বা টিকি কেটে দেয় এবং তাকে সিংখালী নিয়ে যায়। মদন ঘোষের টিকি কাটা হতে মঠবাড়িয়ার ঘোষের টিকিকাটা গ্রামের নামকরণ হয়েছে। গগন ও মোহনের নেতৃত্বে মদন ঘোষকে টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করা হয়।
মদন ঘোষের খুন মামলায় গগন ও মোহনের যাবজ্জীবন সাজা হয় এবং আন্দামানে দ্বীপান্তর হয়। সেখানে জেল সুপারের স্ত্রী স্বর্পাঘাতে মরণাপন্ন হলে গগন তাকে ওঝালি করে ভাল করে তোলেন এবং পুরস্কারস্বরূপ পাঁচ বছর পরে উভয় ভ্রাতা মুক্তি লাভ করেন। দেশে ফিরে বিরজা রতন দাসের অনুগ্রহ লাভ করে গগন ও মোহন তাদের তালুক উদ্ধার করেন। তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী লুফা, কাজী, মৃধা ও চোকদারদের পূর্বপুরুষ গগন ও মোহনদের বাহিনীর বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। অনন্যোপায় হয়ে মিত্রজিত সিং কোম্পানির সাহায্য কামনা করেন। পুলিশ কয়েকবার গগন ও মোহনকে গ্রেফতার করতে আসে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। গগন ও মোহন মিত্রজিতদের সৈয়দপুর পরগণার দশ আনা দখল করে নেয়। তারা কৃষকদের দিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠণ করেন ও সুরক্ষিত দুর্গ নির্মাণ করেন। জমিদার ইংরেজ সরকারের সৈন্য ও পুলিশ নিয়ে প্রজাদের ওপর নির্যাতন চালাত। গগন ও মোহনকে কৃষকরা ইংরেজ অত্যাচার থেকে বাঁচার এক আশ্রয়স্থল রূপে জ্ঞান করতে লাগলো।
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিস্টার হ্যারিসন দেশীয় পুলিশ ও একদল ইংরেজ সৈন্য নিয়ে সিংখালী গমন করেন। তারা পাড়েরহাটের অপর পাড়ে তেলিখালী অবতরণ করেন। ঘোড়ায় চড়ে ম্যাজিস্ট্রেট সিংখালী চলছেন। ইতোমধ্যে গগন, মোহন জঙ্গল হতে গুলি করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাথার টুপি উড়িয়ে দেন। উভয়পক্ষে তীব্র লড়াই হয়। গগন ও মোহন তাদের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করেন। মিস্টার হ্যারিসন গগন ও মোহনের পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে পান। যুদ্ধ করার জন্য গগন ও মোহনের বাড়ি যেভাবে সুরক্ষিত করা হয়েছে তা দেখে হ্যারিসন বিস্মিত হন। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি লিখিত পত্রে হ্যারিসন সিংখালী গমন ও সংঘর্ষের বিবরণ দিয়েছেন।
হ্যারিসনের পর মিস্টার আলেকজান্ডার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন। তিনি গগন ও মোহনকে গ্রেফতার করার জন্য তিন থানার পুলিশ ও শত শত চৌকিদার প্রেরণ করেন। তারাও পরাজিত হয়ে ফিরে আসে। এ সংবাদে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার ক্ষিপ্ত হয়ে পরেন। তিনি নিজে অনেক পুলিশ ও ইংরেজ সৈন্য নিয়ে সিংখালী গমন করেন। তাকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেন মোরেলগঞ্জের মিস্টার মোরেল ভ্রাতৃদ্বয় ও তাদের বাহিনী। আলেকজান্ডার তার ১৯ ডিসেম্বর তারিখে লিখিত পত্রে সিংখালীর ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি তার বাহিনী নিয়ে দু’মাইল হেঁটে খাল অতিক্রম করে মোহনের বাড়ি পৌঁছেন। হঠাৎ ঢাল, লেজা নিয়ে গগন ও মোহন মিস্টার আলেকজান্ডারকে আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে ১৭ জন বিদ্রোহী কৃষক নিহত হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহনের বাড়ি দখল করার চেষ্টা করলে বিদ্রোহীরা ভিতর হতে গুলিবর্ষণ করে। তখন পুলিশ বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাড়াতাড়ি মোহনের বাড়ি ত্যাগ করে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাবার সময় তিনি পুলিশ বাহিনীকে মৃতদেহগুলো আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ প্রাণভয়ে পলায়ন করে। গগন ও মোহন ১৭ জন বিদ্রোহী কৃষকের মৃতদেহ উদ্ধার করে মোহনের বাড়ির দরজায় কবর দেন। তাদের কবরগুলো এখনো বাঁধানো আছে এবং কবরে নামফলক আছে।
ইংরেজ প্রশাসন জমিদারদের সাথে একত্রিত হয়ে গগন ও মোহনের অনুসারী কৃষকদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালাতে থাকে। শেষপর্যন্ত গগন ও মোহন কোর্টে উপস্থিত হন। সরকার তাদেরকে আটটি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে। বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার স্টিয়ার ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর এবং ১৮৫৫ খ্রিস্টাবেদর ৫ জানুয়ারি গগন ও মোহনের বিরুদ্ধে আনীত মামলার রায় দেন এবং উভয় ভ্রাতাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। এরপর তারা ৬০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং ৩০ বছর কারাগারে ছিলেন। শেষজীবনে মুক্তি পেয়ে তারা সিংখালী ফিরে আসেন। তাদের বংশধররা সিংখালী গ্রামের মিয়াবাড়িতে বাস করছেন।
জমিদারদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষার স্বার্থে দক্ষিণবঙ্গে যার আত্মদান সবচেয়ে মহীয়ান তিনি হলেন আশু আকন্দ। ইংরেজ তথা তাদের তাবেদার জমিদারদের বিরুদ্ধে সৃষ্টি হওয়া সারাবাংলার কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে মেহেন্দিগঞ্জের আশু আকন্দ একটি কিংবদন্তিতুল্য নাম। ১২৮৬ সন বা ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে আশু আকন্দের নেতৃত্বে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। বাংলাদেশে কৃষক আন্দোলনে আশু আকন্দের অবদান ও আত্মত্যাগ অতুলনীয়।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার চাঁদপুর গ্রামে আশু আকন্দের জন্ম। আশু আকন্দের পূর্বপুরুষ শেখ কুতুবউদ্দিন একজন পন্ডিত ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। শেখ কুতুবউদ্দিনের পুত্র শেখ মোহন বিশ্বস্ত হিসেবে খ্যাত ছিলেন। লোকে তাকে মোহন শেখ বিশ্বাস বলতেন। শেখ মোহনের পুত্র জহিরুদ্দিন আকন। তার পুত্র আশু আকন্দ একজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক ছিলেন। উনিশ শতকের মধ্যভাগে উলানিয়ার জমিদারদের কৃষক নির্যাতন ও শোষণ চরমে পৌঁছে। আশু আকন্দ জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১২৮৬ সনে (১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে) আশু আকন্দ উলানিয়া ও পার্শ্ববর্তী ২২টি গ্রামের কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেন। তার আহবানে কৃষকরা উলানিয়া জমিদারদের খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেয়। আশু আকন্দের চাঁদপুর গ্রামকে কেন্দ্র করে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এ কারণে চাঁদপুরের অপর নাম জোট চাঁদপুর। আশু আকন্দ ২২টি গ্রামের কৃষক নেতাদের সভা আহবান করেন এবং ১০ সদস্যের কমিটি গঠণ করেন। তারা মসজিদে প্রতিজ্ঞা করেন অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। জমিদারদের নায়েব, পেয়াদা ও লাঠিয়ালদের আক্রমণ আশু আকন্দের নেতৃত্বে বিদ্রোহী কৃষক সমাজ প্রতিহত করে। আন্দোলন দমনের জন্য উলানিয়ার জমিদাররা আশু আকন্দকে ২২ মৌজার তালুক ঘুষ হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। জমিদার বিদ্রোহী প্রজাদের জমি নিলামে দেয়। প্রজারা ঐক্যবদ্ধ থাকায় নিলামী জমি ক্রয়ের কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
নিলাম বিক্রি কার্যকর করার জন্য সরকার ১০ জন শিখ সৈন্য প্রেরণ করে। জমিদার প্রথমে নাপিতের বাড়ি আক্রমণ করে। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুসারে নন্দবাসী পাল সঙ্কেত দিলে হাজার হাজার লোক নাপিতের বাড়ি আসে। জমিদারের বাহিনী গুলি করে কয়েকজন কৃষককে হত্যা করে। কিন্তু জনতার কাছে জমিদারদের বাহিনী পরাজিত হয়ে শিখ সৈন্যসহ পালিয়ে যায়। জমিদার মামলা করে। কিন্তু কোনো প্রজা আশু আকন্দের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রদান করেননি।
জমিদার অবশেষে আশু আকন্দের বন্ধু ভবতোষ তরফদারকে তালুক প্রদানের লোভ দেখিয়ে বশীভূত করে। ভবতোষ আশু আকন্দকে তার বাড়িতে দাওয়াত দেয়। বাংলা ১২৮৬ সনের ১৫ ফাল্গুন (১৮৮০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী) আশু আকন্দ দুইজন সাথী নিয়ে ভবতোষের বাড়ি যান। সংবাদ পেয়ে জমিদার সৈন্য ও কুকুর নিয়ে আশু আকন্দকে আক্রমণ করে। ভবতোষের স্ত্রী ষড়যন্ত্রের কথা আশু আকন্দকে জানিয়ে দিলে তিনি ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু পথে খেজুর গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যান। জমিদার ও কুকুর তাকে ঘিরে ফেলে। জমিদার তাকে বন্দি করে বাড়ি নিয়ে যায়। সংবাদ শুনে হাজার হাজার লোক জমিদার বাড়ি আক্রমণ করে। জমিদার বাহিনী গুলি করতে থাকলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তারা থানায় মামলা করে। পুলিশ আসে সাতদিন পর। পুলিশ তৎক্ষণাৎ আশু আকন্দকে উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করেনি।
আশু আকন্দকে বন্দি করে জমিদারের লোকেরা তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। প্রথমে তার পায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়, শরীরে চামড়া উঠিয়ে লবণ দেয়া হয়, চোখ উপড়ে ফেলা হয় সবশেষে গরম তেলের কড়াইতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কই মাছের মতো তাকে ভাজা হয়। তার মৃতদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আশু আকন্দের স্ত্রী আতরজান বিবি মামলা দায়ের করলেও কিছুই হয়নি। তবে এই মামলার কারণে উলানিয়ার জমিদারী কোর্ট অব ওয়ার্ডের নিকট অর্পণ করে প্রজাদের সান্তনা দেয়া হয়। আশু আকন্দের হোসেন আরা নামের এক কন্যা সন্তান ছিলো। কন্যার বংশধররা এখনো জীবিত আছেন। আশু আকন্দের ভাই নছরউদ্দীনের পৌত্র জসিম উদ্দিন এখনও জীবিত আছেন। জমিদারদের নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় আশু আকন্দকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সরকার এ নির্মম হত্যার কোনো বিচার করেনি। বিদ্রোহী কৃষক সমাজ নীরবে নিভৃতে আশু আকন্দের জন্য কেঁদেছেন। আজও এ অঞ্চলের মানুষ আশু আকন্দের বীরত্বের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
অতীব দুঃখের বিষয় হলো ইংরেজ ও তাদের দোসর জমিদারদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী এসব বীর সন্তানরা ঐতিহাসিক স্মৃতিগাঁথা থেকে আজ প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের ইতিহাস ছিটেফোঁটা যেটুকু আলোচিত ও চর্চিত হয় সে ইতিহাসে বরিশালের যুগান্তর ও অনুশীলন যুগের কতিপয় বীর সন্তানের নাম উচ্চারিত হলেও সৈয়দ ইমামউদ্দিন বা বলখী শাহের নাম উচ্চারিত হতে কোথাও শোনা যায় না। বিভিন্ন স্থাপনা বা সড়কের নামকরণের মধ্যদিয়ে আত্মত্যাগী ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের স্মৃতি ধরে রাখার যে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ রয়েছে সে উদ্যোগে আজও কোনো বলখী শাহ বা সৈয়দ ইমামউদ্দিন বা আশু আকন্দের নাম কোথাও উচ্চারিত হয়নি। যা বড়ই পরিতাপের বিষয়। একটি স্বাধীন দেশে ইতিহাস সচেতনতার ক্ষেত্রে এ বড় করুণ দীনতার বিষয়।
লেখক: স্টাফ রিপোর্টার।