বলিউডে পথচলা শুরু করেছিলেন সালমান খানের হাত ধরে, ‘দাবাং’ ছবির মাধ্যমে। তখন থেকেই দর্শকের মন জয় করেন সোনাক্ষী সিনহা। এক দশকের বেশি সময় পার হলেও, নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আজও তিনি সিনেমার ভুবনে সক্রিয় এবং নতুন ধরনের চরিত্রে পর্দায় ফিরছেন। সম্প্রতি ভাই কুশ সিনহার পরিচালনায় ‘নিকিতা রায়’ ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে, যেখানে তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে, যদিও ছবিটি বক্স অফিসে বড় সাড়া ফেলতে পারেনি।
‘নিকিতা রায়’–এ সোনাক্ষী এক দাপুটে চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আধিভৌতিক থ্রিলারধর্মী এই সিনেমার শুটিংয়ের সময় কিছু ভৌতিক স্থানে কাজ করা হলেও ব্যক্তিগতভাবে কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি তার। তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমার শতভাগ বিশ্বাস নেই, আবার পুরোপুরি অবিশ্বাসও করি না। অনেক সময় এমন মানুষের মুখে অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার গল্প শুনি, যাঁকে আমরা বিশ্বাস করি, তখন সেটা উড়িয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।’
২০১০ সালে ‘দাবাং’–এর মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে সোনাক্ষীর। সালমান খানের বিপরীতে ‘রাজ্জো’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকের হৃদয়ে এক লাফে জায়গা করে নেন। সে অভিষেক স্মৃতিকে মনে করে তিনি বলেন, ‘অভিনয়ে আসার শুরুটা আমার জন্য খুব ভয়ের ছিল। তখন আমার অভিনয়জীবন নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। ভয় যেমন ছিল, তেমনি রোমাঞ্চও। ছবিটি মুক্তির পর দারুণ হিট হয়েছিল। প্রথম দিকে বুঝতেও পারিনি, আমি সত্যিই নায়িকা হয়ে গেছি বা দর্শক আমার অভিনয়কে প্রশংসা করছেন।’
সোনাক্ষীর অভিনয় কেবল বাণিজ্যিক ছবিতে সীমাবদ্ধ নয়। ‘লুটেরা’-তে আবেগঘন চরিত্রে, ‘আকিরা’-তে শক্তিমান অ্যাকশন চরিত্রে, ‘নূর’-এ সাংবাদিক, আর ‘ডবল এক্সেল’-এ সমাজের সৌন্দর্যবিষয়ক ধারণার প্রতিফলনে ভিন্ন রূপে অভিনয় করেছেন তিনি। সমালোচকদের মতে, সোনাক্ষী নিজের অভিনয় দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে তিনি কেবল ‘গ্ল্যামার গার্ল’ নয়, বরং চরিত্রের গভীরে যেতে সক্ষম।
বলিউডে প্রতিটি নায়িকার মতোই তাঁর ক্যারিয়ার সব সময় মসৃণ ছিল না। ‘দাবাং’, ‘রাউডি রাঠোর’, ‘সন অফ সরদার’-এর সাফল্যের পর একসময় কিছু ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তবে ‘লুটেরা’ ও ‘আকিরা’-র মতো ব্যতিক্রমী ছবিতে কাজ করে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অভিনয়ে আসার পর থেকেই আমি শিখেছি, এখানে টিকে থাকতে হলে বারবার নিজেকে বদলাতে হয়। কখনো সাফল্য এসেছে, কখনো ব্যর্থতা। কিন্তু দুটিই আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে।’
বর্তমানে সোনাক্ষী একাধিক ছবির কাজে যুক্ত এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও কাজ করছেন। ‘দহাড়’ ওয়েব সিরিজে পুলিশ অফিসার অঞ্জলি ভাটির চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এখন তিনি এমন চরিত্র বেছে নিচ্ছেন, যেখানে চরিত্রের ভেতরে গভীরতা থাকবে। তিনি বলেন, ‘এখন আর শুধু নায়িকা হওয়ার জন্য ছবি বেছে নিই না। চাই আমার চরিত্রের আলাদা গুরুত্ব থাকুক। দর্শক যেন আমার অভিনয় মনে রাখেন।’
সোনাক্ষী সিনহা প্রমাণ করেছেন, বলিউডে টিকে থাকতে হলে শুধুমাত্র সৌন্দর্য বা খ্যাতি যথেষ্ট নয়; প্রজ্ঞা, সাহস ও চরিত্রের গভীরতা থাকা প্রয়োজন। আজকের সোনাক্ষী কেবল ‘দাবাং’-এর রাজ্জো নয়, বরং এমন একজন অভিনেত্রী, যিনি বাণিজ্যিক ছবির বাইরেও নিজের স্বতন্ত্র স্থান তৈরি করেছেন।