গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েল–হামাস আলোচনা, প্রথম দিনেই ইতিবাচক সাড়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫০ এএম
গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েল–হামাস আলোচনা, প্রথম দিনেই ইতিবাচক সাড়া

মিশরের শারম আল-শেখ শহরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনার প্রথম দিনটি ইতিবাচকভাবে শেষ হয়েছে। আল–জাজিরা, রয়টার্স ও মিসরের আল–কাহেরা নিউজসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আলোচনায় মূলত যুদ্ধবিরতি, বন্দিবিনিময় এবং গাজায় মানবিক সহায়তার পথ খুলে দেওয়ার বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেন হামাসের দুই শীর্ষ নেতা খলিল আল–হায়া ও জাহের জাবারিন। তারা গত মাসে ইসরায়েলি হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। বৈঠকে মধ্যস্থতা করে মিশর ও কাতার।

আল–জাজিরা অ্যারাবিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম দিনের আলোচনায় উভয় পক্ষই কিছু অগ্রগতি করেছে এবং মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) নতুন বৈঠকের কথা রয়েছে। আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার ওপর সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরিকল্পনাটির মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ ও রাজনৈতিক সমাধানের রূপরেখা।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান দ্রুত বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া শেষ করতে, যাতে গাজা যুদ্ধের অবসান পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসে। সোমবার বিকেলে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “আমাদের চুক্তি করার ভালো সুযোগ আছে।” তিনি আরও জানান, হামাস “খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে” সম্মতি দিয়েছে, যদিও সব বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

ওয়াশিংটন থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি রোজিল্যান্ড জর্ডান বলেন, ট্রাম্প আলোচনায় আরব–তুর্কি যৌথ সমর্থনের প্রশংসা করেছেন এবং তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার মাঝেও গাজায় হামলা বন্ধ হয়নি। আল–জাজিরা জানিয়েছে, সোমবারের আলোচনার সময়ই গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে মারা যান। ইসরায়েলি মুখপাত্র শোশ বেদরোশিয়ান বলেন, সেনাবাহিনী “প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম” চালিয়ে যাচ্ছে এবং এখনো কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, হামাসের হাতে থাকা ৪৮ ইসরায়েলি বন্দির মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এই সপ্তাহেই তাদের মুক্তির ঘোষণা আসতে পারে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বন্দিবিনিময়ের পাশাপাশি হামাস গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়বে এবং ইসরায়েল ধীরে ধীরে সেনা প্রত্যাহার করবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে ১ হাজার ১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত এবং প্রায় ২০০ জন জিম্মি হয়েছিলেন। দুই বছর পর, সেই হামলার বার্ষিকীর দিনে নতুন এই আলোচনা শুরু হলো। গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ মারাত্মক খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে রয়েছেন।