বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে সেই পুরনো বিষয়টি। আদালতের নির্দেশে অপমৃত্যু হিসেবে থাকা মামলাটি এবার হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এতে নতুন করে তদন্তে নেমেছে রমনা থানা পুলিশ।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটন প্লাজার বাসা থেকে সালমান শাহর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সরকারি তদন্তে এটি আত্মহত্যা বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তাঁর পরিবার ও ভক্তরা। বরং তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম এই দাবি অব্যাহত রাখেন এবং অবশেষে তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে আদালত মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশের পর রমনা থানা পুলিশ নতুনভাবে তদন্ত শুরু করেছে। তারা ঘুরে দেখেছে সেই ইস্কাটন প্লাজার ফ্ল্যাটটি, যেখানে মৃত্যুর আগে স্ত্রী সামিরা হককে নিয়ে বসবাস করতেন সালমান শাহ। বর্তমানে ফ্ল্যাটটিতে নতুন মালিক থাকলেও সেটি এখনও স্মৃতি ও রহস্যের প্রতীকে পরিণত।
নতুন মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ মোট ১১ জন। আরও কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। একই দিন রাতেই সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, “আমার বোনের ছেলে সালমান শাহ আত্মহত্যা করতে পারে না। এটা হত্যা। আজ এতদিন পর হলেও আমরা সত্যের পথে এক ধাপ এগোলাম।”
অন্যদিকে সালমান শাহর মৃত্যুর আগের দিনটি নিয়েও নতুন করে আলোচনায় এসেছেন নির্মাতা রেজা হাসমত। তিনি জানিয়েছেন, সালমান তাঁর সিনেমা ‘প্রেম পিয়াসী’র ডাবিংয়ের কাজে এসেছিলেন মৃত্যুর আগের দিন রাতে। “সেদিনও সে হাসি-ঠাট্টায় ভরপুর ছিল। কেউ ভাবতেও পারেনি এমন কিছু ঘটতে পারে,” বলেন রেজা হাসমত। তিনি আরও জানান, “পরদিন সকালে সালমানের বাসায় আমার দাওয়াত ছিল। তখন ফোনে শুনি সে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। পরে জানতে পারি, সে আর বেঁচে নেই।”
বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহর উপস্থিতি ছিল এক যুগান্তকারী অধ্যায়। স্বপ্নময় চেহারা ও আবেগঘন অভিনয়ে নব্বইয়ের দশকে তিনি হয়ে ওঠেন ঢালিউডের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। তাঁর অকাল মৃত্যু আজও অমীমাংসিত রহস্য হয়ে রয়ে গেছে কোটি ভক্তের হৃদয়ে।
এখন সবাই তাকিয়ে আছে নতুন তদন্তের ফলাফলের দিকে—প্রায় তিন দশক পর কি মিলবে সালমান শাহর মৃত্যুর আসল সত্য?