নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশায় অর্থনীতি: আস্থার সংকটে বিনিয়োগ স্থবির

এফএনএস | প্রকাশ: ৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৪৯ এএম
নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশায় অর্থনীতি: আস্থার সংকটে বিনিয়োগ স্থবির

দেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরেই আস্থার সংকটে ভুগছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে উদ্বেগ ও অপেক্ষার মনোভাব তৈরি হয়েছে, তার মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। অর্থনীতি কখনোই কেবল সংখ্যায় চলে না; এটি চলে আস্থা, পূর্বানুমানযোগ্যতা এবং নীতিগত স্থিতিশীলতার ওপর। আর এ তিনটি ক্ষেত্রেই আজ সবচেয়ে বেশি চাপ ও সংশয় তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, নির্বাচিত সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের পরবর্তী কিস্তি তারা ছাড় করবে না। তাদের এই অবস্থান শুধু অর্থনৈতিক শর্তের বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং নীতি ধারাবাহিকতার ওপর আস্থা ফিরে পাওয়ার প্রশ্ন। আইএমএফ যে সংকেত দিয়েছে, তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও একইভাবে বিবেচনা করছেন। তাই নতুন বিনিয়োগ এখন প্রায় স্থবির; চলতি বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখাই এখন উদ্যোক্তাদের প্রধান লক্ষ্য। রপ্তানি, আবাসন, উৎপাদন ও নির্মাণশিল্প-প্রতিটি খাতেই নতুন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাময়িক সরকারের ওপর আস্থার সীমাবদ্ধতা থাকে; তারা দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণে বাধ্য থাকে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন স্থায়ী, নির্বাচিত এবং দায়িত্বশীল সরকার গঠনের জন্য। সেই আস্থা না ফেরায় ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমছে, যার প্রভাব পড়ছে শিল্প সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। নতুন কারখানা স্থাপন হচ্ছে না; বরং পুরনো কারখানাগুলোই সংকুচিত হচ্ছে। কেউ কেউ আবার পুঁজি অন্য দেশে স্থানান্তর করছেন। এতে শুধু বর্তমান অর্থনীতি নয়, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি দেশের ব্যাংক খাতে সুদের হার এখনও দ্বিগুণ অঙ্কে ঘোরাফেরা করছে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ইতিহাসের অন্যতম সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতি এখন শুধু শ্বাস নিচ্ছে; এগিয়ে চলার শক্তি তার নেই। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে-রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, রপ্তানি আয়ে গতি ফেরানো এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা-তবে এগুলো সাময়িক স্বস্তি ছাড়া আর কিছু নয়। দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিহিত রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতায়। এ অবস্থায় জরুরি হলো নির্বাচনের সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্টতা প্রদান, আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। কারণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি আস্থা-আর সেই আস্থা ফিরে আসে রাজনৈতিক বৈধতা থেকে। একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে না শুধু আইএমএফের অর্থছাড় সহজ হবে, বরং বিনিয়োগকারীদের মাঠে ফেরা, শিল্প সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থানে নতুন গতি আসবে। অর্থনীতি আবার হেঁটে চলতে পারবে-যদি আস্থা পুনর্গঠনের সেই প্রথম শর্তটি পূরণ হয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে