টেকসই অর্থায়নে ভাটা: উদ্বেগের ইঙ্গিত

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম
টেকসই অর্থায়নে ভাটা: উদ্বেগের ইঙ্গিত

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব এখন আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়-এটি আজকের চরম বাস্তবতা। কৃষি, শিল্প, জ্বালানি ও নগরায়ণসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় টেকসই উদ্যোগ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও সেই পথে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই অগ্রযাত্রায় নতুন এক স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই ও সবুজ খাতে বিনিয়োগ কমেছে ৯ হাজার ৬০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা নেমে এসেছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকায়। বিশেষভাবে টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন কমেছে ৮ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ৯১৪ কোটি টাকারও বেশি। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়-এটি দেশের টেকসই অর্থনীতির গতি থেমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে চলমান ঋণের অন্তত ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে ও ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়া ভবিষ্যতের জলবায়ু-সংবেদনশীল অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে টেকসই অর্থায়নের আওতায় কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা, সামাজিক দায়িত্বশীল প্রকল্পসহ ৬৮ ধরনের পণ্য রয়েছে। এ খাতগুলোতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া মানে-পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগে গতি কমে যাওয়া। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও শিল্প খাতের টেকসই উন্নয়নে। অবশ্য বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উচ্চ সুদের হার, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে বিনিয়োগ মন্থর হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবুও বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশে টেকসই খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীদের একযোগে এই ঘাটতি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার ‘সবুজ প্রবৃদ্ধি’কে জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই এখনই প্রয়োজন টেকসই অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া উন্নয়নের ভারসাম্য সম্ভব নয়। অর্থায়নের এই সাময়িক ভাটা যেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পরিণত না হয়-সেই নিশ্চয়তা এখনই দিতে হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে