ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনেক আগেই বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বাজারের মোড়ে, স্কুলের গেটের পাশে, কৃষকের ধানক্ষেতের পাশে প্রার্থীরা মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করছেন। শুধু নির্বাচনী প্রচারণা নয়, স্থানীয়দের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে আস্থা অর্জনের চেষ্টা চলছে দিনরাত।
আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার সাতটি আসনের মধ্যে দুটি এবং ২০১৮ সালে পাঁচটি আসন হারানোর পর বিএনপি এই দুর্গ পুনরুদ্ধারে এখন তৎপর। তবে একক প্রার্থী দিয়ে আসনটি পেতে মরিয়া জামায়াতে ইসলামী।
নির্বাচনী তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে বগুড়া-৫ আসনটি প্রথম আওয়ামী লীগের হাতে যায়। দলটি থেকে মোস্তাফিজুর রহমান পটল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হয় এই আসন। বিএনপির সিরাজুল হক তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে আসনটি আবার ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির শাহজাহান আলী তালুকদার সংসদ সদস্য হন। এরপর টানা চারবার বিএনপি ও ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারবার আওয়ামী লীগের হাতে যায় এই আসন। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে ছয়বার আওয়ামী লীগ, পাঁচবার বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে একবারের জন্যও এই আসনে জয়ের দেখা পায়নি জামায়াত।
বগুড়া-৫ আসনে ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৬৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৫ হাজার ১৭৬ জন। নারী ভোটার দুই লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন।
এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক চার বারের এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। এরইমধ্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে শুরু করেছেন প্রার্থীরা। সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘শেরপুর-ধুনটের মানুষ শুধু উন্নয়ন চায় না, তারা সাহসী নেতৃত্ব চায়, যারা তাদের অধিকার রক্ষা করবে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করবো।’ বগুড়া-৫ আসনে প্রথমবারের মতো জয়ের চেষ্টায় জামায়াত।
অপরদিকে এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মীর মাহমুদুর রহমান চুন্নু। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হলে নাগরিকদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ যেমন-শিশু ও বৃদ্ধদের সহায়তা, গ্রামীণ শিক্ষার প্রসার এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের বিষয়ে কাজ করবো।’
বগুড়া-৫ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা দবিবুর রহমান। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। প্রতিদিন সকালে গ্রামের প্রধান পথ, বাজার, মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং জনসমাবেশে উপস্থিত থেকে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন।তিনি বলেন, ‘জামায়াত একটি সুসংগঠিত দল। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে বহু আগে থেকেই তাদের কথা ভেবেছি। এখনো ভেবে যেতে চাই। মানুষের রায় আমরা মাথা পেতে নেবো।’
শেরপুর-ধুনট আসনে মূল চ্যালেঞ্জগুলো এখনো সমাধান হয়নি। অনেক গ্রাম ও পৌর এলাকার স্কুলে শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। শিক্ষকদের অভাব ও বেসরকারি স্কুলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত। ফ্লাইওভার, উপজেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নেই। জরুরি চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহে সমস্যা রয়েছে।
রাস্তাঘাট অনেক জায়গায় খানাখন্দপূর্ণ। গ্রামের রাস্তা ও সেতু উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ নেই। নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও গ্যাস সরবরাহ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। এসব সমস্যা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তরনী সেন রায় নামের একজন বৃদ্ধ ভোটার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আগে অনেকবার প্রার্থী এসেছে, কথা দিয়েছে কিন্তু বাস্তবে কিছু হয়নি। এবার আমরা চাই বাস্তব কর্মসূচি চালানো নেতাকে। আমাদের আশা, যে প্রার্থী ভোটে জিতবে, সে আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
শাকিল মাহামুদ নামের একজন তরুণ ভোটারের ভাষ্য, ‘উন্নয়ন দরকার, তবে যার মধ্যে নেতৃত্বের সাহস ও সততা রয়েছে, তার ওপর আমরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’ আমিরুন বেওয়া নামের এক নারী বলেন, ‘আমরা এমন কাউকে ভোট দেবো যিনি শুধু কথা বলবেন না, কাজে দেখাবেন।’