দীর্ঘ বছর পর্যন্ত অনাবাদী থাকা প্রায় আড়াই হাজার একর ফসলি জমি চাষাবাদে উপযোগী করতে বরিশালে খাল খনন কার্যক্রমের উদ্বোধণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমন।
বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নে দীর্ঘদিনের অনাবাদী আড়াই হাজার একর কৃষিজমি পুনরায় চাষাবাদের আওতায় আনতে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) খাল খনন কাজের উদ্বোধণ করেন জেলা প্রশাসক।
জলাবদ্ধতা নিরসন ও খালে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে বিএডিসির খাল খনন কার্যক্রমের আওতায় বরিশাল-ভোলা-ঝালকাঠি-পিরোজপুর অঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের বিলের পোল এলাকা থেকে নাপিতবাড়ি পর্যন্ত কৃষিজমির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া দুই কিলোমিটার ‘স্বনির্ভর খাল’ পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়।
একইসাথে ভেঙে পড়া কালভার্ট পূর্ণনির্মান কার্যক্রমও শুরু করা হয়। খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, বিএডিসির সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদ মুরাদ, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম, এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী আল ইমরান, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী রাশেদ খান, বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আতায়ে রাব্বী, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম ভৌমিক, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহসহ স্থানীয় সুবিধাভোগী কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএডিসির বরিশাল জেলা কার্যালয়ের এ প্রকল্পে প্রায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি ৩০ ফুট চওড়া ও ৯ ফুট গভীর করে খনন করা হবে। একইসাথে সড়কে নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ফলে প্রায় এক যুগ পর এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার একর অনাবাদী কৃষিজমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে ও চাষাবাদের আওতায় আসবে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, সদর উপজেলার দিনার, নয়ানি, চর আইচা ও পূর্ব চরকাউয়াসহ পাঁচটি গ্রামের দুই হাজারের বেশি কৃষক বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। মীরাবাড়ি সড়কের ভাঙা কালভার্টটি পূর্ণনির্মান ও খাল খননের ফলে সেচ সুবিধা বাড়বে। বাড়তি মাটি দিয়ে সড়ক সংস্কার করা হবে; এতে কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন।
কৃষক আজাহার হোসেন বলেন, ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খালটি খনন করেছিলেন। দীর্ঘদিন পর জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটি পুনঃখননের ফলে অনাবাদী জমি আবারও কৃষির আওতায় ফিরে আসবে।
জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমন বলেন, বরিশাল অঞ্চলে ভরাট হয়ে যাওয়া সব খাল পর্যায়ক্রমে খনন করা হবে। খাল খননে জলাবদ্ধতা কমবে, সেচ সুবিধা বাড়বে এবং কৃষকরা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভবান হবেন।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা বাড়াতে ৬৫ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। চলতি বছর আরও ৩০ কিলোমিটার খাল খননের লক্ষ্য রয়েছে। এতে ৩০ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।
বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ কিলোমিটার খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশাল অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদন সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বরিশাল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম ভৌমিক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন হলে শুধু চরকাউয়া ইউনিয়নেই বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।