অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৮ মিনিটে দুজনই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুজনের সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। কার্যালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে তারা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে জানানো হয়, সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের পরে যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলন করা হবে, তবে সেখানে কে বক্তব্য দেবেন তা স্পষ্ট করা হয়নি।
তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় সামনে আসতেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে কয়েকদিন ধরে জোর আলোচনা চলছিল। কারণ, তারা দুজনেই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। নির্বাচন কমিশন বুধবার সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা জোরালো হওয়ায় পদত্যাগের গুঞ্জন আরও বেড়ে যায়।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সেখানে তিনি নিশ্চিত করেন যে তিনি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন করব, এটা নিশ্চিত, তবে পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই জানানো হবে।” কোন দল থেকে প্রার্থী হবেন সে বিষয়ে তিনি পরে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন।
গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয় এবং জুলাই থেকে আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের দিকে গড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তখন উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম দায়িত্ব পান।
নাহিদ ইসলাম পরে উপদেষ্টা পদ ছাড়েন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম। তিনি শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন, পরে শপথ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পান।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আছে, আসিফ মাহমুদ ঢাকা ১০ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন এবং তিনি ইতোমধ্যে ওই আসনের ভোটারও হয়েছেন। তার পদত্যাগে সেই জল্পনা আরও প্রবল হয়েছে।