ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছে। রাজধানীর বাংলামোটরের অস্থায়ী কার্যালয়ে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানালেন, ক্ষমতায় যাওয়াই তাঁদের লক্ষ্য নয়। বরং সংস্কার কিনারা করা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাই এনসিপির প্রধান উদ্দেশ্য।
কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নাহিদ বলেন, আসন জয়ের হিসাব কষে তাঁদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, তাই কোনো জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনও দেখেননি। তাঁর ভাষায়, তাঁরা নির্বাচনে এসেছেন সংস্কারের পক্ষে জনগণের সম্মতি জানাতে। তাঁর মতে, এবারের নির্বাচন মূলত একটি গণভোট, যেখানে ভোটের কেন্দ্রীয় প্রশ্ন হ্যাঁ অথবা না। সেই হ্যাঁ মানে সংস্কারের ধারাবাহিকতা, আর না মানে পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে এনসিপি প্রথম ধাপে ১২৫ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রার্থী তালিকা তুলে ধরেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে। এতে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রবাসী ও সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নাহিদ ইসলাম জানান, দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে, কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে না। মনোনীত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এবং এই প্রক্রিয়া ৩০০ আসনের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
রাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অনুরাগীরা সাত মাস ধরে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আশা ছিল পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভেতরে সংস্কার আনবে। কিন্তু তারা দলীয় দ্বন্দ্ব আর নিজের এজেন্ডা নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে। তাই তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিপির জন্ম হয়েছে।
এ সময় নির্বাচনকে ঘিরে নাহিদ নানা অভিযোগও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে পোস্টারিং এবং অর্থ ব্যয়ের বিষয়গুলোও চলছে। এমনকি বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা কিছু স্থানে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, এসব কর্মকাণ্ড সংস্কারকে ব্যাহত করতে পারে, তাই দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনী মাঠে নানান প্রশ্নে নাহিদ স্পষ্ট করেন যে কোনো আসন বিশেষ কারও জন্য ফাঁকা রাখা হয়নি। মনোনয়ন বোর্ডের সুপারিশই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে। দলের বাইরের যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মানুষও মনোনয়ন পাচ্ছে। তিনি বলেন, এনসিপির প্রার্থী তালিকা পুরোপুরি অন্তর্ভুক্তিমূলক, যা ৩০০ আসনের তালিকায় আরও বিস্তৃত হবে।
আখতার হোসেনের মতে, এনসিপির লক্ষ্য মানুষের সামনে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি উপস্থাপন করা। কৃষক, নারী, যুবক, পাহাড়ি এবং প্রবীণসহ সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব যেন তালিকায় থাকে, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের পুরো সময়জুড়ে স্পষ্ট ছিল, আসন নয়, বরং গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নেই মনোযোগী নতুন দলটি। নাহিদ ইসলামের ভাষায়, তাঁদের কাজ জনগণকে সংস্কারের পক্ষে হ্যাঁ ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করা।