বেগমগঞ্জে বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিন স্মৃতি স্তম্ভ, প্রজন্ম ‘৭১’, কালাপোলে বধ্যভূমি, শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান সহ মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি গুলো অরক্ষিত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে। এই স্মৃতি গুলো সংরক্ষন থাকলে নতুন প্রজন্মরা সঠিক ইতিহাস লালন করতে পারবে।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল পাক বাহিনী কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে নোয়াখালী অভিমূখী হয়ে সোনাইমুড়ী এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এক গ্রুপ রেল লাইন দিয়ে অপর গ্রুপ বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা সরকারি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্প করে। বেগমগঞ্জে আসার সময় উভয় এলোপাতাড়ি ভাবে শত শত বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট করে। পরদিন ১৮ই এপ্রিল চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশনে পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের সম্বন্বয়ে আমান কমিটি গঠন করে। এর পর থেকে তারা পুরো বেগমগঞ্জে খুন, অগ্নি সংযোগ, নারী নির্যাতন করতে থাকে। বেগমগঞ্জের মানুষ ৭ই মার্চের ভাষনের পর থেকে পাক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সহযোগীতায় পাক বাহিনী বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্পে এনে পুরুষদের হত্যা ও নারীদের নির্যাতন করতো। এসময় তারা যাদেরকে হত্যা করতো তাদেরকে বস্তাভর্তি করে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার উত্তরে কালাপোলের নিচে ফেলে দিতো। লাশ গুলো পানিতে ডুবে যেত বা লাশ গুলো ভেসে মহেন্দ্র খাল দিয়ে লক্ষ্ণীপুরের দিকে চলে যেত। এই স্মৃতি রক্ষায় বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রজন্ম ‘৭১’ ও কালাপোলে বধ্যভূমি নির্মান করা। এছাড়া পাক বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসরদের সহযোগীতায় গোপালপুরে এক দিনে চুয়ান্ন জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। সেজন্য গোপালপুরে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান হয়। অন্যদিকে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় নির্মিত বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিন স্মৃতি স্তম্ভ ও আমিন বাজার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ এবং চৌমুহনী পাবলিক হল চত্তরে বেগমগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ মুক্তিযুদ্ধ কালীন স্মৃতি গুলি অরক্ষিত থাকায় তা হুমকির মুখে পড়েছে। এই স্মৃতি গুলো সুরক্ষা করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে।
বেগমগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালী বলেন, বেগমগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি গুলি অরক্ষিত থাকায় ইতিহাস বিকৃতকারী চক্র সুযোগ বুঝে সব কিছু ধ্বংস করতে পারে। তাই এই স্মৃতি গুলো রক্ষা করা প্রশাসনের পাশাপাশি সকলকে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার কায়েসুর রহমান বলেন, আমি এই উপজেলায় কয়েক দিন আগে আসার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সংরক্ষনে চেষ্টা করে আসছি। এর মধ্যে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিন স্মৃতি স্তম্ভ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সৌন্দর্য বর্ধন এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতি গুলি সংরক্ষনে চেষ্টা চলছে।