নির্বাচনে কারিগরি ষড়যন্ত্র মানবে না জনগণ, নতুন রাজনীতির ডাক জামায়াত আমিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম
নির্বাচনে কারিগরি ষড়যন্ত্র মানবে না জনগণ, নতুন রাজনীতির ডাক জামায়াত আমিরের

আগামী দিনের নির্বাচনে কোনো ধরনের কারিগরি ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে জামায়াত কোনো আনুকূল্য চায় না। তবে কমিশন যদি কারও প্রতি পক্ষপাত দেখায়, তা বরদাস্ত করা হবে না।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত যুব ম্যারাথন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কালো টাকায় মানুষকে কেনার চেষ্টা করলে জনগণ তার জবাব দেবে। তাঁর ভাষায়, “মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত জাতিকে কালো টাকায় কেনা যাবে না।”

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পুরোনো ব্যবস্থার রাজনীতি ছুড়ে ফেলে নতুন ব্যবস্থার রাজনীতিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। যে রাজনীতি হবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, মামলাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, তারুণ্যের নতুন বাংলাদেশ গড়ে না ওঠা পর্যন্ত এই আন্দোলন থামবে না, যত বাধাই আসুক।

বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এসে দেশকে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে। তাঁর দাবি, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম ছিল, যার পরিণতি মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। এরপর ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দলটি একই ধারার রাজনীতি অব্যাহত রেখেছে।

জামায়াত আমির বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ হাতজোড় করে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। “তারা বলেছিল, আমরা ভালো হয়ে গেছি। হাতে তসবিহ ছিল, মাথায় ঘোমটা ছিল। মানুষ বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই তারা আবার আপন রূপে ফিরে যায়,” বলেন তিনি। তৎকালীন এক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন দলীয় কর্মী মারা গেলে তার বিনিময়ে দশজনকে হত্যার ঘোষণা কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে, সেটিই সেই সময় প্রমাণ করেছিল।

স্বাধীনতা পরবর্তী প্রেক্ষাপট টেনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষকরা যে স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, স্বাধীনতার পরের শাসকগোষ্ঠী সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও রক্ষীবাহিনী গঠন করে নির্যাতন চালানো হয়েছে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে মানুষের লাশ মাঠে-ঘাটে পড়ে ছিল, দাফনের ব্যবস্থাও ছিল না।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এখন পলাতক থেকে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য তরুণ ও বিপ্লবীরা। সেই লক্ষ্যেই জুলাইয়ের অন্যতম শীর্ষ নেতা ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ওসমান হাদির কিছু হলে বিপ্লবীরা বসে থাকবে না। বিপ্লবীর সংখ্যা কমবে না, বরং বাড়বে।”

যুবকদের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, অতীতের বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে ফেলে দিতে হবে। বাংলাদেশে এমন রাজনীতি প্রয়োজন, যা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে দাঁড়াবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, “আমরা শুধু দলের বিজয় চাই না। আমরা চাই ১৮ কোটি মানুষের বিজয়।”

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি আবারও বলেন, কমিশনকে শপথ অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে হবে। সামান্য পক্ষপাতও জনগণ মেনে নেবে না।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে যুব ম্যারাথনের সূচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাব হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ম্যারাথনে অংশ নেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে