শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে দেওয়া কিছু জামিন মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে আইন উপদেষ্টা এই অবস্থান তুলে ধরেন। সেখানে তিনি জানান, ফয়সাল করিম মাসুদকে গত বছর র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। পরে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। এ ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে জামিন দেওয়ার ন্যায্যতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
আসিফ নজরুল লেখেন, হাইকোর্ট বিচারিক কাজে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর কোনো দেশেই হাইকোর্টের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, বাংলাদেশেও নেই। তাই ফয়সালের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততার প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ফয়সাল অস্ত্র মামলায় জামিন পেয়েছেন, যেখানে সাধারণত জামিন পাওয়া কঠিন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রভাবশালী আইনজীবীদের অবস্থানের কারণে কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলায় জামিন সহজ হয়ে যায়। এসব আইনজীবীর বড় একটি অংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারিক বিবেচনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, একটি বেঞ্চে চার ঘণ্টার মধ্যে আটশ মামলায় জামিন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওই প্রশ্ন তোলার ঘটনা ঘটে ২৩ অক্টোবর, ২০২৫। এর পর ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ একশ্রেণির আইনজীবীর পক্ষ থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবিও ওঠে বলে জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, আইনে জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত, চিহ্নিত সন্ত্রাসী কিংবা জামিন পেলে পুনরায় অপরাধে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে এমন ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত। তিনি জানান, এই উদ্বেগের কথা তিনি মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও আলোচনায় তুলেছেন।
নিম্ন আদালত থেকেও গত ১৬ মাসে দেওয়া কিছু জামিনের প্রসঙ্গ তুলে আইন উপদেষ্টা বলেন, কয়েকটি মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অভিযোগপত্রে আসামির অপরাধে সম্পৃক্ততার তথ্য নেই, এমনকি দলীয় পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়নি। এরপরও জামিন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ এ বিষয়ে যথাযথ বিচারিক বিবেচনা ছাড়া যেনতেনভাবে জামিন না দেওয়ার কথা তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জামিন বাণিজ্যে জড়িতদের উদ্দেশে কড়া সতর্কবার্তাও দেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দেবেন না।” বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিলে সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের সুযোগ করে দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।