দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজপথ থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদীর ওপর হত্যাচেষ্টা আমাদের শুধু শোকাহত করেনি, বরং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার বিষয়েও গভীর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। ভোটের মর্যাদা যখন জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য হয়, তখন এই ধরনের সহিংস ঘটনা আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বড় সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। হাদী একজন সাধারণ নাগরিক নন; তিনি একজন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই তার ওপর হামলা শুধুই ব্যক্তিগত নয়, এটি রাজনৈতিক সহিংসতার একটি জ্বলন্ত প্রতীক। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা তত বৃদ্ধি পায়। হাদীর হত্যা চেষ্টা সেই ধরনের ভীতি সৃষ্টির চেষ্টারই অংশ। এ ধরনের ঘটনা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটের মঞ্চে যদি নেতা বা ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন, তাহলে নির্বাচন কখনই নিখুঁত ও সুষ্ঠু হয় না। ভোটাররা যখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকবেন, তখন তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রভাবিত হবে। এই পরিস্থিতি গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে। এই ঘটনার আরেকটি দিক হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয়। নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও ভীতি নতুন নয়; তবে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার চেষ্টা করা দেশের রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতার জন্য বড় ধাক্কা। এটি শুধু হাদীর ওপর নয়, সমগ্র নির্বাচনী পরিবেশে ভীতি সৃষ্টি করছে। যদি প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন সক্রিয় না হয়, ভোটাররা ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ভোট দিতে বাধ্য হবে। রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব বেড়ে গেছে। তারা নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সমালোচনা বা বিতর্ক স্বাভাবিক, কিন্তু সহিংসতায় রূপ নেওয়া কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। হাদীর ওপর হত্যাচেষ্টা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভীতি ও সহিংসতার কোনো স্থান নেই নির্বাচনে। ভোটারদের দায়িত্ব হলো যুক্তি ও চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে ভোট দেওয়া, ভয় বা হুমকিতে নয়। যদি জনগণ সাহসিকতার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, তাহলে সহিংসতার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। সর্বশেষে বলা যায়, হাদীর হত্যাচেষ্টা কেবল ব্যক্তিগত ঘটনার সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের সামনে একটি বড় বার্তা রেখেছে: নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই গণতন্ত্রের জয় নিশ্চিত করে। রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও জনগণ—এই তিনটি ক্ষেত্রই মিলিতভাবে কাজ করলে নির্বাচনকে ভয়মুক্ত রাখা সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, নির্বাচন শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার পরীক্ষা। হাদীর ওপর হামলা আমাদের সতর্ক করছে—ভয় ও সহিংসতার আগে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের সাহসিকতা, প্রশাসনের সচেতনতা এবং রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলতা মিলিত হলে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী নির্বাচন দেখতে পাব।