প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান

এম এম মামুন; রাজশাহী
| আপডেট: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম | প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম
প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাস্তব জীবনচিত্র গণমাধ্যমে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বক্তারা। একই সঙ্গে সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ও মানবিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে রেইনী পার্ক রেস্টুরেন্টে কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের আয়োজনে ‘পিডব্লিউডি ও সিনিয়র সিটিজেনদের পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়া ক্যাম্পেইন কমিউনিটিতে তাদের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আলোচনায় বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা ও বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকলেও অজ্ঞতা, তথ্যঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনেকেই এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনুসন্ধানী ও মানবিক সাংবাদিকতার মাধ্যমে এসব বঞ্চিত মানুষের কথা সামনে আনা গেলে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সহজ হবে। বক্তারা আরও বলেন, দুর্বল গোষ্ঠী বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। সমাজের মূলধারায় তাদের অন্তর্ভুক্ত না করা হলে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। সচেতনতা সৃষ্টি, নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ইতিবাচক সামাজিক মনোভাব গঠনে গণমাধ্যম কার্যকর অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। দুর্বল গোষ্ঠী বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (এসডিডিবি) ব্যাপক সামাজিক অন্তর্ভুক্তির প্রচার প্রকল্পের আওতায় এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, “প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নন; বরং তারা আমাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও মানবিক মূল্যবোধের ধারক। তাদের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের দায়িত্ব।”তিনি আরও বলেন, সরকারি সেবা গ্রহণে তারা যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা, সহজ যোগাযোগব্যবস্থা ও প্রবেশযোগ্য অবকাঠামো নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। এরপর প্রাক বড়দিন উদ্যাপন করা হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক ড. আরোক টপ্য। তিনি বলেন,“এসডিডিবি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর সমাজ ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা। সামাজিক অন্তর্ভুক্তি শুধু সহানুভূতির বিষয় নয়; এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার।”তিনি জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদার করা হচ্ছে, যাতে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সম্মানজনক ও নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনসী ইসরাইল হোসেন। তিনি বলেন, দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে সেবাব্যবস্থা ও সামাজিক প্রস্তুতি গড়ে ওঠেনি। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখনও নানামুখী বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন। এসব সমস্যার সমাধানে নীতিগত সংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কারিতাস বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের বিশপ জের্ভার রোজারিও। তিনি বলেন, “একটি মানবিক সমাজ গঠনের মাপকাঠি হলো—সেই সমাজ দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি কতটা সংবেদনশীল।” ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবুল কালাম সাহিদ। জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা (এসডিডিবি) আগষ্টিন রাতিয়া নুনিয়ার সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, জেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উদয় আঞ্জেলো রোজারিও, সমাজসেবা কর্মকর্তা ড. মো. হামিদুল ইসলাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি আল মামুন। প্রতিবন্ধীদের পক্ষে বক্তব্য দেন রজনীগন্ধা প্রতিবন্ধী সংস্থার সভাপতি আসাদুজ্জামান রাশেদ। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার পরিমাণ খুবই কম। এ ক্ষেত্রে কারিতাস বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি এ ধরনের উদ্যোগ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান। আলোচনায় জানানো হয়, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, কর্মসংস্থান, চলাচলের সুযোগ, সামাজিক স্বীকৃতি ও তথ্যপ্রাপ্তিতে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; গণমাধ্যম, উন্নয়ন সংস্থা ও কমিউনিটির সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া প্রকৃত সামাজিক অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। সভা শেষে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, মর্যাদা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ জোরদারের আহ্বান জানানো হয়।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে