অর্ধশত বছরের পরিত্যাক্ত ভবনের ঝুঁকিতে আমতলী আদালতের ২০ হাজার বিচারপ্রার্থী

এফএনএস (মোঃ আবদুল্লাহ আল নোমান; আমতলী, বরগুনা) : | প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
অর্ধশত বছরের পরিত্যাক্ত ভবনের ঝুঁকিতে আমতলী আদালতের ২০ হাজার বিচারপ্রার্থী

অর্ধশত বছরের পুরাতন পরিত্যাক্ত বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) দ্বিতল দুটি ভবনের ঝুঁকিতে আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ২০ হাজার বিচারপ্রার্থী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পরগাছা জন্ম নেয়া ভবন সংলগ্ন প্রবেশ পথ দিয়ে আদালতে প্রবেশ করছেন। এতে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। দ্রুত পরিত্যাক্ত ভবন দুটি অপসারনের দাবী তাদের। 

জানাগেছে, আমতলী উপজেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সামনে ১৯৭৫ সালে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ মেশিনারিক যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি মজুদ রাখতে দুইটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। ওই ভবন দুটি ১৫ বছর আগেই উপজেলা প্রশাসন পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছেন। কিন্তু তারা ভবন দুটি অপসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে এমন অভিযোগ বরগুনা জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত প্রকিসিউটর অ্যাড. জসিম উদ্দিনের। ওই সময় থেকেই ভবন দুটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। ওই ভবন দুটির মধ্যখান থেকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মুল প্রবেশদ্বার। ওই প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রতিদিন বিচার কার্যে হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আদালতে আসা-যাওয়া করছেন। ভবন দুটি এতোই ঝুকিপুর্ণ যে কোন সময় ধ্বসে যেতে পারে। ফলে প্রাণহানীর আশঙ্কা করছেন তারা। ভবন দুটিতে পরগাজা জন্ম হয়ে ভুতুরে অবস্থায় পরিনত হয়েছে। দিনের বেলায় ভবনের ভেতরে মানুষ প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছে। দ্রুত ওই ভবন দুটি অপসারণের দাবী আদালতের বিচারপ্রার্থীদের।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, দুইটি ভবনের ইট পাথর ও ভীম খসে পরছে। ভবনে পরগাছা জন্ম হয়ে ভুতুরে অবস্থায় পরিনত হয়েছে। দুই ভবনের মাঝখান দিয়ে আদালতের প্রবেশদ্বার নির্মাণ করা হয়েছে। ভবন ধ্বসে পরলে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে।  

বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ মাষ্টার বলেন, আদালতের সামনে এভাবে দুটি পরিত্যাক্ত ভবন দেখতে যেমন অসুন্দর, তেমনি জীবনের ঝুঁকিও অনেক। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এতো ঝুঁকিপুর্ণ ভবন আদালতের যেমন ভাবমুর্তি বিনষ্ট করছে,  তেমনি আদালতের প্রবেশদ্বার দিয়ে চলাচলকৃত মানুষের বেশ ঝুঁকি রয়েছে। আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের পেশকার মোঃ আবুবকর বলেন, আদালতের প্রবেশ পথের দুই পাশে দুইটি দ্বিতল পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওই ভবন দুটি ধ্বসে পরলে প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে। 

আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের আইনজীবি অ্যাড. নুহু-উল আলম নবীন বলেন, বিএডিসির পরিত্যাক্ত ভবন দুটি বিচারপ্রার্থী ও আইজীবিদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। আদালতে প্রবেশ পথে কখন কি হয়ে যায় আল্লাই জানে? 

আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি মজুদ রাখতে ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়। ওই ভবন দুটি অনেক আগেই উপজেলা প্রশাসন পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু কেন তারা অপসারণ করা হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়? 

বরগুনা জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, পরিত্যাক্ত ভবন দুটি অপসারণ করতে উপজেলা প্রশাসনকে বেশ কয়েকবার অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবিদের জীবনের ঝুঁকি লাঘবের দাবী তার। 

আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, আগের পরিত্যাক্ত তালিকায় ওই ভবন দুটি থাকতে পারে। তবে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ওই পরিত্যাক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে