দীর্ঘ প্রায় সতেরো বছর পর দেশে ফিরলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে সিলেটে যাত্রাবিরতির মধ্য দিয়ে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।
বিমান সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-২০২ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ড শেষে ফ্লাইটটি সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী, ফ্লাইটটির হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে।
এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সপরিবারে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ সময় তখন বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৩৬ মিনিট। বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯০০ উড়োজাহাজে পরিচালিত এই ফ্লাইটের রুট ছিল লন্ডন হিথ্রো, সিলেট, ঢাকা।
বিমান পরিচালনাকারী সূত্র জানায়, ফ্লাইটে উচ্চপর্যায়ের যাত্রী থাকার কারণে বিশেষ নিরাপত্তা ও সমন্বয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারেক রহমানের জন্য উড়োজাহাজে নির্ধারিত ছিল এ-ওয়ান আসন। সিলেটে বিমান অবতরণ করলেও তিনি সেখানে নামেননি। তার আগমন ঘিরে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাধারণ যাত্রী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ সীমিত রাখা হয় এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় না করার অনুরোধ জানায় বিএনপি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, “আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি সিলেটে অবতরণ করেছে।” তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে একই ফ্লাইটে রয়েছেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, ব্যক্তিগত সচিব আব্দুর রহমান সানি, দলের প্রেস উইংয়ের সালেহ শিবলী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কামাল উদ্দীন, সৈয়দ মইনউদ্দিন আহমেদ এবং তাবাসসুম ফারহানা।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানোর কথা রয়েছে। এরপর তিনি পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে প্রস্তুত গণসংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। পরে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন এবং সেখান থেকে গুলশান-২ নম্বরের বাসভবনে ফিরবেন।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। পূর্বাচলের সংবর্ধনাস্থলে ভোর থেকেই নেতাকর্মীদের ঢল নামে। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড আর অপেক্ষার উত্তেজনায় এলাকা পরিণত হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশে।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ১৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন তারেক রহমান। মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তিনি। পরবর্তী সময়ে একের পর এক মামলার কারণে তার দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি। অবশেষে সেই দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে তিনি ফিরলেন নিজের মাতৃভূমিতে।