কক্সবাজারের চকরিয়ার বদরখালী-মহেশখালী সেতুতে গত ৪ মাস ধরে সংঘঠিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চকরিয়া উপজেলা ও মহেশখালী উপজেলার যাত্রীবাহী কোন ধরণের যানবাহন পারাপার না করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার সাধারণ জনগন ও ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ২০২৪ সালে শুরু হওয়ায় কোটা বাতিল নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সেতুতে টোল আদায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় মারাত্মক লোকশানের মুখে পড়েছে সেতু ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তির শিকার সাধারণ জনগন, ব্যবসায়ী, সেতু ইজারাদার ও গাড়ীর মালিক শ্রমিকরা উর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানাগেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কক্সবাজার এর আওতাধীন চকরিয়া বদরখালী-মহেশখালী সেতুটি সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে বিগত ১৬ জুলাই’২৩ইং থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য ইজারাদার নিযুক্ত হন মেসার্স দৌলত কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী দিদারুল ইসলাম এমরান। যা নির্বাহী প্রকৌশলী কক্সবাজার কার্যালয়ের স্মারক নং ৩৫.০১. ২২২৪.১৩২.২৩/২০৭৪ মূলে কার্যাদেশ পান। বদরখালী সড়কের ১৭ তম কি:মি: মহেশখালী সেতুর দৈর্ঘ্য ৩৪৭.৫২ মিটার। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর হতে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রচলিত নিয়মে টোল আদায় ও ইজারা চুক্তি অনুযায়ী সরকারী রাজস্বও পরিশোধ করে আসছেন। বিগত ২০২১-২৩ সনের তিন অর্থ বছরে সেতু ইজারা মূল্য ছিল ৭ কোটি ৩৯ লাখ। বর্তমানে ২০২৩-২৬ অর্থ বছরে সেতুটি’র ইজারা মূল্য ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা। যা বিগত অর্থ বছরের দুই গুন বেশি। ফলে সেতু ইজারার প্রতিদিনের গড় মূল্য পড়েছে ১ লাখ ৩০হাজার ৯৯৮টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, ২০২৪সনে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন, সরকার কর্তৃক জারীকৃত কারফিউ এর কারনে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস বদরখালী-মহেশখালী সেতুর উপর চলাচলকারী যান-বাহন বন্ধ ছিল। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনকে কেন্দ্রে করে কিছু দুষ্কৃতীকারী উক্ত সেতুর টোল আদায়ের নির্মিত টোলঘরে আক্রমন এবং টোল আদায়ের টাকা আত্নসাৎ করে আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতিও লুটপাট করে নিয়ে যায়। স্থানীয় জনগন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে সেতুতে টোল আদায়ও বন্ধ থাকে। এছাড়াও চলতি সনের ৫জানুয়ারী রাত ১০টার দিকে এক তরুণী বাশখালী হতে নিজ বাড়ি মহেশখালী যাওয়ার পথে বদরখালী-মহেশখালী সেতু সংলগ্ন পূর্বঅংশে প্যারাবনে গণধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ সন্ধিগ্ধ প্রায় ৮জনকে গ্রেফতারও করেন। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চকরিয়া উপজেলা ও মহেশখালী উপজেলার যানবাহন চলাচল গত ৪মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বিগুন মূল্যে নিযুক্ত হওয়ায় সেতু ইজারাদার অন্তত পক্ষে ২০২৫ সালের এপ্রিল পযর্ন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা লোকশানের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার মেসার্স দৌলত কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী দিদারুল ইসলাম এমরান।
তিনি আরো জানান, ২০২৩ ও ২৪ সনে প্রাকৃতিক সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলি,হামুন ও রেমাল এর দূর্যোগের কারণেও সেতুতে টোল আদায় বন্ধ ছিল। তিনি (ইজারাদার) বিষয়টি সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে জানিয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। মাতারবাড়ি,মহেশখালী সোনাদিয়া ধলঘাট এলাকায় সরকার আরো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও তা স্থবির হয়ে আছে। ইজারাদার কর্তৃপক্ষ সে আশায় পূর্বের ইজারার চেয়ে দ্বিগুন ইজারামূল্যে সেতু ইজারা নিলেও মেয়াদ শেষে গুণতে হবে বিশাল আকারের লোকশান। উক্ত বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে আসা প্রয়োজন বলে মনে সচেতন মহল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বদরখালী-মহেশখালী সেতু দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখায় দীর্ঘ ৩৪৭.৫২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু পারাপারে জনগন থেকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। গাড়ী থেকে নেমে নতুন করে ভাড়ায় রিক্সা, টমটম ইজি বাইকে উঠতে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে নতুন করে গাড়ী ভাড়া। এ বিষয়টিও দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কক্সবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন চৌধুরী খালেদ জানান, ইজারাদারের দেয়া লিখিত আবেদনটি পেয়েছেন। তা চলমান পরিস্থিতিসহ বিশেষ বিবেচনা আনতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হয়েছে। যেহেতু আমাদেরই ঠিকাদার। সেহেতু তাদের ক্ষতি ও লোকশানের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।