দৌলতপুরে পদ্মার নদীর ভাঙন রোধে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা, এলাকাবাসির স্বস্তি

এফএনএস (মোঃ সাইফুল ইসলাম শাহিন; দৌলতপুর, কুষ্টিয়া) : : | প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
দৌলতপুরে পদ্মার নদীর ভাঙন রোধে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা, এলাকাবাসির স্বস্তি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রমত্ত পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কিছুটা হলেও অবশেষে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। পদী ভাঙনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলা থেকে ভুরকাপাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডাম্পিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী ডাম্পিং ব্যবস্থা সমাধান না হলেও এর ফলে মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলা পাড়া ও ভুরকা থেকে রাইটা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকার হাজার হাজার মানুষের বসতভিটা ও আবাদী জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারী-বেসরকারী অনেক স্থাপনা রক্ষা পাবে। নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা শুরু হওয়ায় উপজেলার নদীপারের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আসছে বর্ষার আগেই দ্রুত কাজ শেষ করার দাবী এলাকাবাসীর। এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা এই ৪টি ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে বন্যা হয়। ফলে অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়াসহ নদী ভাঙন দেখা দেয়। ফলে এ সময় বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। পরে পানি শুকিয়ে গেলে নদী ভাঙন কমে যায়। কিন্তু পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমেও মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া, ভুরকা থেকে শুরু করে ভেড়ামারা উপজেলার রাইটা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সারা বছরই নদী ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের কবলে পড়ে হাজার হাজার কৃষক তাদের ফসলি জমিসহ স্বর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে মহিষকুন্ডি-রাইটা বাধ, বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠাসহ বহু স্থাপনা। এ কারণে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়ে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছিলেন। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডর অনুন্নয়ন বাজেট থেকে ২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে ভাঙন কবলিত এলাকা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হাটখোলাপাড়া থেকে ভুরকা পর্যন্ত ডাম্পিং করার পরিকল্পনা হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ডাম্পিং এর জন্য প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার পিচ বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকননুজ্জামান, দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মান নিয়ন্ত্রক সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রিফাত উপস্থিত ছিলেন। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে নদীভাঙনের কবল থেকে হাজার হাজার কৃষকের জমিসহ ঘরবাড়ি রক্ষা পাবে বলে জানান ভাঙনকবলিত নদীপারের মানুষ। মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া গ্রামের কৃষক আজিম সরদার বলেন, এই কাজ শেষ হলে এলাকাবাসীর অনেক উপকার হবে। হাজার হাজার মানুষের কৃষি জমিসহ মহিষকুন্ডি-রাইটা বাধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা পাবে। নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী নেতা রকি আহমেদ বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী দীর্ঘদিনের। বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা নদী ভাঙন রোধে নদী পাড়ে বিভিন্ন কর্মসূচী করেছে।  জিও ব্যাগ দিয়ে বাধ নির্মানের পাশাপাশি স্থায়ী ব্লক দেয়ার দাবী জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মান নিয়ন্ত্রক সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রিফাত বলেন, কাজের যথাযথ মান যেন ঠিক থাকে তার জন্য কাজ ঢাকা ও কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন রোর্ডের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছে। জিও ব্যাগ, বালির মান ও  পরিমানসহ সকল উপকরণ পরীক্ষা করার পরই তা ডিম্পিং কাজের জন্য জিও ব্যাগ নদীতে ফেলার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কাজ উদ্বোধনের পর দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ বলেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের তদারকিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কাজের শুরু করা গেছে। এক কিলোমিটার জায়গায় ডাম্পিং করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসন এসব এলাকায় সিমেন্টের ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাধ দেয়ার জন্য সার্ভে সহ প্রয়োজনীয় কাজ চলমান রেখেছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান বলেন, স্থায়ী বাধ না হলেও ভাঙন রোধে এই জিও টিউব কার্যকরী হবে। বর্ষার আগেই এ কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন ,কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। নদী রক্ষায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মরিচা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙন থেকে থেকে রক্ষা পাবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে