নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের ব্যর্থতায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অপরাধ

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: : | প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৮ এএম : | আপডেট: ৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের ব্যর্থতায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অপরাধ

নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অপরাধ। নিরাপত্তা ঘাটতিতে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে শিশু নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা কিংবা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে খুন করার প্রবণতা। আর অপরাধ কমানোর জন্য যা করণীয় তা রাষ্ট্রের বা সরকারের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বড় পরিবর্তন এলেও অনেক কর্মকর্তাই অপরাধের ধরন বুঝতে পারছেন না। চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে রাজধানী, সিলেট ও বগুড়ার শেরপুরে ঘরে ঢুকে পাঁচটি খুন ও একটি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। ওসব ঘটনায় ছয় ভুক্তভোগীর চারটিই শিশু। তাছাড়া রাজধানীতে ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ও পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কলহের ঘটনায় আরো ৬ জন খুন হয়েছে। তবে ওসব ঘটনা বাসার বাইরে ঘটেছে। ওসব অপরাধের ঘটনা নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আর গত দুই মাসে সারা দেশে খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভুক্তভোগী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত দু’মাসে সারা দেশে শুধু নারী ও শিশু খুন হয়েছে ১৪৬ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ৬২ জন আর অক্টোবরে ৮৪ জন। রাজধানীর ধানমন্ডি ও পল্লবী এলাকায় নিজ ঘরে খুন হয়েছে দুই শিশুসহ তিনজন। আর আজিমপুরে ডাকাতির মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও ডাকাতরা নিয়ে যায়। তাছাড়া পল্লবীতে দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আর ধানমন্ডির একটি বাসায় ঢুকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকিৎসককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ধানমন্ডি ৮/এ রোডের একটি পাঁচতলা বাড়ির দোতলায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। জানা গেছে, ওই বাড়ির মালিক আব্দুল রশিদ। তিনি গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসেন। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হঠাৎ তাদের বাসা থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে বাড়ির ভাড়াটিয়ারা ছুটে আসেন। তখন কয়েকজন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা হলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো আসামিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান মতে, গত ১০ মাসে ঢাকার বিভিন্ন থানায় খুনের মামলা হয়েছে ৪৬০টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই হয়েছে সর্বোচ্চ ১৪৮টি। এছাড়া আগস্টে ১১৯টি, জুলাইয়ে ৫৯টি, অক্টোবরে ৫৮টি, মার্চে ১৮, মে মাসে ১৬, এপ্রিলে ১৪, জুনে ১৩, জানুয়ারিতে ১১ ও ফেব্রুয়ারিতে হত্যা মামলা হয়েছে ৪টি। এছাড়া গত ১০ মাসে দস্যুতার ১৮৩টি, ডাকাতির ২৯টি, অপহরণের ৮৭টি ও চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫০৯টি। এর মধ্যে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দস্যুতার মামলা ৩৯টি, ডাকাতি ১৪টি, অপহরণের ৪৭টি ও চুরির মামলা হয়েছে ৯৬টি। তবে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় অনেকেই থানায় অভিযোগ দিতে যান না। যে কারণে অপরাধের সঠিক চিত্র মামলার এই পরিসংখ্যানে উঠে আসে না। এদিকে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. ওবায়দুর রহমান জানান, মাসভিত্তিক খুন বা হত্যার ঘটনায় মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অনেক বেশি মামলা হয়েছে। ওই তিন মাসে খুনের মামলা হয়েছে মানেই ওই মাসগুলোতেই খুনের ঘটনা ঘটেছে এমন নয়। অনেকে বিগত দিনের খুনের ঘটনায়ও মামলা করছেন। অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর জানান, এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত ৯৯৯-এ ফোন দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর আগে থানা পুলিশকে জানান। থানা-পুলিশ দ্রুত সহযোগিতা করবে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করবে। শিশু অপহরণ, শিশুহত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, খুনসহ প্রতিটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনাই সমান গুরুত্ব দিয়ে থানা-পুলিশ তদন্ত করছে। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW