বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট কারচুপির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। প্রয়োজন ওসব কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই লক্ষে বিগত হাসিনা সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের অনিয়ম তদন্ত করবে সরকার। একই সাথে রাতের ভোট ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ভূমিকা তদন্ত করা হবে। তাছাড়া পুলিশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সুপার, থানার ওসিদের দায়িত্ব পালন এবং তাঁদের ভূমিকারও বিশ্লেষণ করা হবে। সরকারি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাতের ভোট ও ভোট কারচুপির সংশ্লিষ্টতা মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত সরকারের তিনটি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ডিসি, বিভাগীয় কমিশনারদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সাবেক সমাজকল্যাণ সচিব এবং নির্বাচন কমিশনের সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশ বিভাগের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অনেককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রাখা হয়েছে। তাদের অনেকে বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। কেউ কেউ চিকিৎসা কিংবা বিদেশপড়ুয়া ছেলেমেয়েকে দেখার নামে বিদেশে যাচ্ছে। বিগত নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকারের এমন অবস্থানে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক কর্মকর্তার মতে, তাঁদের কিছুই করার ছিল না। কারণ চাকরি করতে হলে সরকারের শীর্ষ মহলের কথা শুনতে হবে। সূত্র জানায়, নির্বাচনকালে মাঠে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের রাতের ঘুম হারাম গেছে। কারণ ভোট কারচুপির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না বলে সরকারের নীতিনির্ধারকমহল থেকে জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে সরকারের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাই রাজি হননি। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর কাজ করছে বলে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব জানিয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, বিগত সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা মনে করেন, বিগত সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দিনের ভোট আগের রাতেই গ্রহণ, ব্যাপক জালিয়াতি এবং ডামি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসাররা সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। তাঁদের সহায়তায় হাসিনা সরকার নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে। প্রশাসন মনে করছে, হাসিনা সরকারের অনৈতিক কাজে সহায়তা না করলে ফ্যাসিজম দীর্ঘায়িত হতো না। সুতরাং এ জন্য প্রশাসন ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায় কম নয়। বরং তারাই হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে মূল উদ্যোগী ছিলেন। যারা হাসিনা সরকারকে সহযোগিতা করে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) নেতাদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে উদাহরণ দেয়ার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যেন ভুলে না যান তাঁরা জনগণের চাকর। তারা যেন দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ না করেন। অন্যদিকে বিএএসএর দাবি প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এ বি এম আব্দুস সাত্তার জানান, বিগত সরকারের ভোট ডাকাতির নির্বাচনে যারা জড়িত ছিলেন, তারা শুধু গণতন্ত্রকেই হত্যা করেননি, বরং রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছে। কিন্তু দু-একজন ছাড়া কারো বিরুদ্ধে সরকার উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। তারা যেখানেই থাকুন না কেন তাদের চাকরিচ্যুত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আইনের আওতায় আনা হোক। সরকারের কাছে তাদের তালিকা দেয়া হয়েছে।