২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় দুই শতাধিক আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার (১৯ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ ও জামিন শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার পর কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ মেজর সৈয়দ মো. ইউসুফ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর হাজিরা দাখিল করে। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং সাক্ষী দুই ঘণ্টা ধরে পিলখানার সেদিনের ঘটনা এবং নিজের বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা আদালতে তুলে ধরেন।
এরপর প্রায় ৫০০ আসামির পক্ষে জামিন শুনানি হয়। এদের মধ্যে ছিলেন হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জন এবং ১০ বছরের সাজা শেষ হওয়া ২৫৬ জন। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনও জামিন আবেদন করেন।
আদালত বলেন, “যখন কোনো ইনজাস্টিস হয়, তখন জাস্টিস পুনরুদ্ধার করা উচিত। যারা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত।” বিচারক জামিন প্রাপ্তদের জামিননামা দাখিলের জন্য দুই দিন সময় দেন, যেন দণ্ডপ্রাপ্ত কেউ ভুলক্রমে মুক্তি না পায়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দুই দিন পর জামিননামা দাখিল করা হবে। এরপর জামিনপ্রাপ্তরা কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। “তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। তবে আদালত শর্ত দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র খালাসপ্রাপ্তরাই জামিন পাবেন। এই সংখ্যা দুই শতাধিক হতে পারে।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের ইতিহাসে এটি ছিল এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
বিদ্রোহের পর বিডিআর-এর নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়— হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে। ২০১৩ সালে হত্যা মামলার রায়ে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়। বিস্ফোরক মামলার বিচার কার্যক্রম ২০১০ সালে শুরু হলেও মাঝে স্থগিত হয়ে যায়।
পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।