পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চাকরি হারানোর শঙ্কা বিরাজ করছে। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় উপপরিদর্শক (এসআই) পদের ৩১০ জনকে অব্যাহতি দেয়ার পর প্রশিক্ষণরত ৩ হাজার ৫৭৪ জন কনস্টেবল চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। বিগত সরকারের শেষ সময়ে ওই উভয় পদের জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। তাছাড়া বিগত দেড় দশকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদের সদস্যদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে জড়িত কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেজন্য শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে থানার কনস্টেবল পর্যন্ত অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিগত সরকারের মতাদর্শী অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এখন গত ১৫ বছরে পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গত সরকারের শেষ সময়ে কনস্টেবল, এসআই ও সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) নিয়োগ পর্যালোচনা চলছে। গত জুন মাসে পুলিশে ৩ হাজার ৫৭৪ জন কনস্টেবল নিয়োগ পায়। মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৬৪ জেলায় চার পর্বে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। ওই সময়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক), পুলিশ সদর দপ্তরের রিক্রুটমেন্ট ও ক্যারিয়ার প্ল্যানিং শাখা, ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। নিয়োগে বিশেষ ঢাকা বিভাগকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে পুলিশ নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়োগ শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে কর্মরত কিছু সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে তা করা হয়। ওসব কর্মকর্তারা লিখিত পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থী ও তাদের পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় সংগ্রহ করেছে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। সেজন্য কনস্টেবল নিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছয়টি বিসিএসে পুলিশে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের আমলনামা নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২৮, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৪০ ও ৪১তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে আট তথ্যের সন্ধান চলছে। আন্দোলনের সময় ওসব ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে।
সূত্র আরো জানায়, কনস্টেবল নিয়োগের কিছুদিন আগে ৮০৪ জন এসআই নিয়োগ পান। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মতাদর্শী হিসেবে সন্দেহভাজনদের বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এসআইদের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কনস্টেবলদের নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের মধ্যে অনেকে গরিব পরিবারের সন্তান বলে তথ্য মিলেছে। সেই বিষয়টিও আমলে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় শতাধিক হত্যা মামলায় দেড়শ’র বেশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রয়েছেন। পাশাপাশি পরিদর্শক, উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল পর্যায়ের অনেককে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে এর আগে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিন দফায় ৩৬৯ এসআইকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর ২৫২ ও ২৫ অক্টোবর ৫৯ জনকে শোকজ করা হয়। সর্বশেষ ৪ নভেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয় ৫৮ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ আনা হয়।
অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেলে পুলিশের বেশ কয়েকজন শীর্ষকর্তাও আত্মগোপনে চলে যান। এরই মধ্যে কেউ কেউ ধরা পড়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন।