শৈলকুপায় মাটি ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে সবজির চারা

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : : | প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
শৈলকুপায় মাটি ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে সবজির চারা

পলিনেট হাউজে প্লাস্টিকের ট্রেতে সারিবদ্ধ ভাবে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চারা। বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক কৃষি চাষ পদ্ধতি এটি। এসব চারার সঙ্গে মাটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে মাটির স্পর্শ ছাড়াই প্লাস্টিকের ট্রেতে জৈবসার মিশ্রন ও নারিকেলের ছোবড়ার মধ্যে বীজ বপণ করে চারা উৎপাদন করা হয়। এ পদ্ধতির নাম কোকোপিট।এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে কোনো কীটপতঙ্গও আক্রমণ করতে পারে না। ফলে সুস্থ ও সবল ভাবে চারা গুলো বেড়ে ওঠে। আর এইসব অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ভাবে সবজির চারা উৎপাদন করছে কৃষি উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারের পাশে টাইটান এগ্রো নামে নার্সারিতে পলিনেট শেডের চারদিকে নেট (জাল) দিয়ে ঘিরে কোকোপিট পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করছেন সাইদুর রহমান। ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষিতে আগ্রহী হন তিনি। একপর্যায়ে চারা কিনতে ঝামেলা হওয়ায় নিজেই ভালো এবং মানসম্মত চারা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে অনলাইনের মাধ্যমে নারিকেলের ছোবড়া, প্লাস্টিকের ট্রেসহ প্রয়োজনিয় সামগ্রী সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করেন। প্রথমে ৫ হাজার চারা উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে তার নার্সারিতে তিন লাখ চারা তৈরির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।টাইটান এগ্রো নার্সারিতে দেখা যায়,কলা,টমেটো,মরিচ,বেগুন,ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, স্কচ,লেটুসপাতা,পেঁপে, লাউ,ফুলকপি,গাজর,লাউ, মিষ্টি কুমড়াও বাধাকপিসহ ১৫ থেকে ২০ ধরনের চারা তৈরি হচ্ছে। প্রথমদিকে তেমন সাড়া না পেলেও বর্তমানে প্রতি মাসে তিন থেকে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি হচ্ছে এই নার্সারি থেকে, যা নিজের ও আশপাশের কৃষকের চাহিদা মিটিয়ে পৗঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আধুনিক এই নার্সারিতে চারা তৈরি ও পরিচর্যায় কাজ করছে ৫ জন শ্রমিক। প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিতে হয় তাদের। এতে তাদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।

টাইটান এগ্রো নার্সারির ম্যানেজার বলেন,এই নার্সারির উদ্দেশ্য হলো ভালো মানের চারা উৎপাদন করা। মাটিবিহীন কোকোপিট দিয়েসুস্থ সবল উন্নতমানের চারা তৈরি করছি। একজন কৃষক ভালো বীজ পেলেও সুস্থ সবল চারা তৈরি করতে পারে না,খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রাকৃতিক আবহাওয়া বৃষ্টি এবং মাটির কারণে বীজটা নষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু এখানে পলি হাউসে এই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করছি, এখানে বৃষ্টির পানি বা অন্য প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় চারা নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। চারপাশ নেট দিয়ে ঘেরার কারণে পোকা মাকড় আক্রান্ত করতে পারে না, রোদ বৃষ্টির সমস্যা নাই, যখন যেমন প্রয়োজন তেমন তাপমাত্রা দেওয়ার কারণে সবগুলো চারা একই রকম হয়। যার কারণে একই সঙ্গে চাষ করা যায়। কৃষকরাও এখান থেকে সুস্থ ও উন্নত মানের চারা কিনতে পারছে।

উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। কৃষিকাজ করতে গিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে চারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখান থেকেই এ কাজে যুক্ত হই। প্রথমে নিজের চাহিদা মিটাই। কৃষকরা আমাদের কাছে চারা চাইলে কৃষকদের কথা মাথায় রেখে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্যিক ভাবে চারা উৎপাদন করেছি। যে ধরনের সবজির চারা প্রয়োজনে সেই অনুযায়ি চারা সরবরাহ করে থাকি এবং কৃষকদের সহযোগিতা করে থাকি।একজন কৃষকের একটি সবজির চারা তৈরি করতে ৩৫ থেকে ৪০ দিন সময় লাগে। এছাড়া বিভিন্ন সার কীটনাশক প্রয়োজন হয়। আমরা সেই কৃষকের চারা তৈরির প্রথম কাজটাই করে দিচ্ছি। আমরা মাটির কোনো স্পর্শ ছাড়াই উন্নত মানের চারা তৈরি করে থাকি। কোকোপিটের এই পদ্ধতিতে চারা মৃত্যুর হার ও রোগবালাই খুবই কম। কোকোপিট তৈরি করতে প্রথমে নারিকেলের ছোগলা পানিতে ভিজিয়ে রাখি। সেগুলো ভালো করে শুকিয়ে সঙ্গে জৈব সার, জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করে চারা রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।পরে প্লাস্টিকের ট্রেতে কোকোপিট দিয়ে চারা রোপণ করা হয়। সঠিক পরিমাণে পানি দিয়ে সঠিক আবহায়ায় রাখার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা বেরিয়ে যায়। সর্বমোট ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আমাদের এখানকার চারা গুলো মাটিতে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠীর চন্দ্ররায় বলেন, শৈলকুপা উপজেলাতে টাইটান এগ্রো বর্তমানে উন্নতমানের চারা উৎপাদন করছে।এখানে কোকোপিটের মাধ্যমে পলিনেটেট হাউসে চারা উৎপাদনের জন্য কারিগরি পরামর্শ দিয়ে আসছি। সেই সঙ্গে এই চারার প্রাপ্তি সম্পর্কে বিভিন্ন কৃষকের মাঝে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছি। এখানে উৎপাদিত চারা থেকে বেশি ফলন পাওয়া যাবে এবং সুস্থ সবল চারা হওয়ায় রোগবালাই পোকামাকড় আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে। আমরা আশা করছি টাইটান এগ্রো থেকে উৎপাদিত চারা, কৃষকরা ক্রয় করতে বেশি আগ্রহী হবেন। চারা উৎপাদনে আধুনিক এই পদ্ধতিটি সবখানেই ছড়িয়ে দিতে পারলে ফসল উৎপাদনে ভালো ফলন পাবেন কৃষক।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে