সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে এনসিপি

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার (২০ এপ্রিল) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এই দাবি জানান।

দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে ইসির প্রতি অন্তত দশটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—মনোনয়নপত্র সশরীরে জমা দেওয়ার বিধান, দলীয় নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি, ঋণখেলাপিদের নির্বাচন অযোগ্য ঘোষণা, হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিল, ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যখন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা দিয়েছেন, তখন এর আগেই ইসি যে নিজস্ব রোডম্যাপ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এনসিপি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ভাষায়, “রোডম্যাপ সম্পর্কে আমরা শুনেছি নির্বাচন কমিশন থেকে, প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে নয়। সেজন্য ইসিকে সতর্ক থাকা উচিত। সরকার বা ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা আসার আগেই কোনো বক্তব্য দেওয়া ইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করে।”

২০২২ সালে গৃহীত সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনকে অবৈধ দাবি করে এনসিপি বলেছে, এই আইনের অধীনে গঠিত বর্তমান ইসি নয়, বরং সংস্কারপন্থী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠিত একটি নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হওয়া উচিত।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা সেই আইনকেই প্রত্যাখ্যান করেছি যেটি সব দলই বিরোধিতা করেছিল। যদি ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংস্কার আসে, তাহলে ইসি পুনর্গঠনের সম্ভাবনা থাকবে। আমরা কারও প্রতি ব্যক্তিগত আপত্তি করছি না, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের পক্ষে কথা বলছি।”

বিগত ১৫ বছরে অনুষ্ঠিত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণ ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে এনসিপি দাবি করেছে, এই নির্বাচনগুলোর সঙ্গে জড়িতদের-সকল প্রার্থী, দলীয় ব্যক্তিত্ব ও ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা—তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হোক।

পাটওয়ারীর মতে, “দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রকৌশলী কাঠামো কাজ করেছে। আগামী নির্বাচনে যদি গণতান্ত্রিক পথচলা নিশ্চিত করতে হয়, তবে অতীতের অপকর্মের বিচার করতে হবে।”

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে, পাতা বাই পাতা, শব্দ বাই শব্দ, তার বাস্তব প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আমরা সিইসির সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে নির্বাচন কমিশন চাইলে অভ্যন্তরীণ ও নিত্যকার কার্যক্রম চালাতে পারে, তবে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনার আগে অবশ্যই ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট ও সরকারের সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

এনসিপির নেতারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাদের উত্থাপিত সংস্কার দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে