কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে (৫৫) গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে সন্তানদের খোঁজ নিয়েছিলেন সাবেক এই কাউন্সিলর।
শুক্রবার বিকালে খুলনা মহানগরীর দেয়ানার হোসেন শাহ রোডের ২১২ নম্বর রোডে সাবেক কাউন্সিলরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বহু মানুষের জটলা। তাদের মধ্যে সদ্য পিতৃহারা টিপুর ছেলে তাসিন রব্বানি রাহাতকে (১৩) পাশে নিয়ে বসে আছেন টিপুর বৃদ্ধ পিতা গোলাম আকবর। ছেলের শোকে কাতর তিনি। যেন কান্নাও ভুলে গেছেন। খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাহাতও বাকরুদ্ধ। তারা যেন কথা হারিয়ে ফেলেছেন।
আর্তনাদ করতে করতে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুর স্ত্রী সাবিহা আক্তার বলেন, ‘বুধবার মাগরিবের নামাজের পর আমাকে ফোন দিয়ে বলে-নামাজ পড়েছ, বাচ্চারা কোথায়? তখন আমি বললাম, বাচ্চারা আছে, চা খেয়ে আমি বাচ্চাদের পড়তে বসাবো।’
তিনি বলেন, ‘আর কোনো দিন সে আর আমাদের খোঁজ নেবে না। বাচ্চাদের কথাও জানতে চাইবে না। আমার স্বামীকে গাজী কামরুল (সাবেক চরমপন্থি দল নেতা) প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতেন। আমার স্বামীকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
জানা গেছে, ঢাকা থেকে কেসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত আরেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসান ইফতেখার চালুর সঙ্গে গত মঙ্গলবার কক্সবাজারে গিয়েছিলেন কেসিসির সদ্য অপসারিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপু। কক্সবাজারে অনেক আগে থেকেই গোলাম রাব্বানী টিপুর মাছের ব্যবসা ছিল। এর আগে লবণের ব্যবসাও ছিল তার। এ ব্যবসার কারণে টিপুর কক্সবাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বুধবার সকালে তারা কক্সবাজারে পৌঁছে একটি হোটেলে ছিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সেই হোটেলে কাটান। রাত সাড়ে আটটার দিকে গোলাম রব্বানী সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানের ভেতরে কাঠের তৈরি সেতুর পাশে হাঁটছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেল যোগে দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে গোলাম রব্বানীর মাথায় গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে টিপুকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এলাকার অনেকেরই জড়িত রয়েছে। কারণ টিপু সব সময় অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে চলাফেরা করতেন। বিভিন্ন কারণে তার অনেক শত্রু ছিল।
টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা বলেন, ‘খুলনার দৌলতপুর, পাবলাকেন্দ্রিক শত্রুরাই আমার ভাই গোলাম রাব্বানী টিপুকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করেছে। তারা বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছে।’
টিপুর স্ত্রী সাবিহা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘তার স্বামীর এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি মানুষের সালিশ-দরবার করতেন। এটা ভালো চোখে দেখতেন না এক সময়ের শীর্ষ চরমপন্থি দল নেতা গাজী কামরুল। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিতেন। গাজী কামরুলই মেইন। তিনিই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তিনি কারো ভালো চায় না।’
নিহত টিপুর বৃদ্ধ পিতা গোলাম আকবর বলেন, ‘আমার ছেলে খুব ভালো ছিল। সে মানুষের উপকার করত। কারো কোনো ক্ষতি করেনি। আমার সেই ছেলেকে বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব। আমার সামনে আমার ছেলের গুলিবিদ্য লাশ আনবে তা আমি সহ্য করতে পারব না।’
খুলনা নগরীর দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, ‘গোলাম রাব্বানী টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় আগে হত্যাকাণ্ডসহ ২টি মামলা ছিল। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পরে খালিশপুর থানায় তার নামে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে তার লাশ এখনো কক্সবাজারে রয়েছে। বাড়িতে পৌঁছেনি।’