কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ, একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ, একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। এছাড়া আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়:  
১. রাজনীতি নিষিদ্ধ: ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।  
২. একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।  
৩. তদন্ত কমিটি গঠন: গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।  
৪. দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: সংঘর্ষে জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এবং জড়িত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।  
৫. আহতদের চিকিৎসা: আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।  
৬. নিরাপত্তা জোরদার: ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানান এবং তা না মানলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।  

শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করা।
২. গতকালের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।  
৩. ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা।  
৪. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা।  
৫. ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ।  

বুধবার সকাল থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। দুপুর একটার মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা প্রশাসনিক ভবনসহ সাতটি একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।  

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) মো. নাজমুল হাসান রাজীব জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।  

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তগুলো নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের সব দাবি নিয়েই আলোচনা হয়। সভায় ছাত্রদের সব দাবি মেনে নেওয়া হলেও ভিসিসহ কয়েকজনের পদত্যাগের দাবিটি নাকচ হয়।’’  

কুয়েট ক্যাম্পাসে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনা রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা এখন দেখার বিষয়। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে