৬ দফা দাবিতে বড়পুকুরিয়া খনি গেটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর অবস্থান কর্মসুচি

এফএনএস (প্রভাষিকা রীতা গুপ্তা; ফুলবাড়ি, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
৬ দফা দাবিতে বড়পুকুরিয়া খনি গেটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর অবস্থান কর্মসুচি

দেশের একমাত্র কয়লাখনি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার গ্রামবাসীরা ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবিতে খনির ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচী শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে খনির প্রধান গেটে অবস্থান নেয় ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির ভেতরে অবস্থানরত কর্মকর্তা কর্মচারীসহ তাদের পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়লা উত্তোলনের জন্য ভূÑগর্ভে মাইন বিস্ফোরনের সময় ভূপৃষ্ঠে কম্পনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পনের ফলে বাড়িঘরে ফাটলসহ বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভূমি অবনমন, সুপেয় পানির সংকট, রাস্তাঘাট টেকসই না হওয়া, গাছের ফলমূল উৎপাদন ব্যহত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিগত দেড় বছর ক্ষতিপূরনের দাবিতে আন্দোলন করলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী আজকের এ অবস্থান কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানার খনির পার্শ্ববর্তী  বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙা, মোবারকপুর, জব্বারপাড়া, রসুলপুর, চক মহেশপুর, চৌহাটি, সাহাগ্রাম, দূর্গাপুর, হামিদপুর ও পূর্ব শেরপুরসহ মোট ১২টি গ্রামের সহস্রাধিক নারী পুরুষ খনি গেটে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে। এসময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনী, সহ-সভাপতি আলী হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো. হোসেন আলী, সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু শিবলীসহ অনেকে।

বক্তারা দাবি করেন, ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ভূ-গর্ভের নিচে মাইন বিস্ফোরণ করতে হয়। সেই মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৩-৪ মাইল এলাকা পর্যন্ত কেঁপে উঠে। এতে ১২টি গ্রামে কাঁচা পাকা বাড়িঘর গুলি প্রতিনিয়ত ফেটে যাচ্ছে। রাত্রিতে পরিবার পরিজন ও ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে আতঙ্কে ঘুমাতে হচ্ছে। আমরা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২০১৬ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছি। যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অধিকার আদায়ের। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার আমাদের সাথে বৈষম্য শুরু করেছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গত সেপ্টেম্বর মাসে দেখা করতে গেলেও তিনি আমাদের সাথে দেখা করবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি করতে গিয়ে এখানে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখন পথে বসেছি। গত দেড় বছর ধরে জোড়ালো আন্দোলন চলছে। নির্ধারিত সময়ে দাবি আদায় না হওয়ায় অস্থান কর্মসূচী চলছে।

ছয়দফা দাবি গুলো হলো- অবৈধ ভাবে ভূগর্ভে বিস্ফোরক ব্যবহারের কারণে সকল ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ দেয়া, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সকল রাস্তাঘাট মেরামত করা, এলাকার বেকার ছেলে ও মেয়েদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী দেয়া, ক্ষতিগ্রস্থ সকল এলাকায় সুপেয় পানির সমস্যা সমাধান করা, ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে যাদের ভূমি থেকে কয়লা উত্তলন করা হচ্ছে তাদের কয়লা উৎপাদন বোনাস ৫% দেয়া ও মাইনিং সিটি অথবা উন্নতমানের বাসস্থান তৈরি করা। এদিকে খনির প্রধান গেট সহ সব গেটে আন্দোলনকারী গ্রামবাসি অবস্থান করায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির অভ্যন্তরে অবস্থানরত আবাসিক কর্মকর্র্তা কর্মচারী ও তাদের পরিবার। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে।

এবিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ইতোপূর্বে খনি সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের মানুষ আন্দোলন করছিল, সেগুলো যাচাইবাছাই করে দেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদেরকে একটা অনুদান দেয়া হয়েছে। এখন তাদের দেখা দেখি খনি থেকে একটু দূরে ১৩ গ্রামের লোকজনও ক্ষতিপূরণের দাবি করছে। 

তিনি বলেন, এব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, ঢাকা ইউনিভার্সিটির একটি ভূতত্ত্ব এক্সপার্ট টিমের মাধ্যমে প্রকৃত পক্ষে ওই এলাকায় কম্পন হচ্ছে কি না বা খনির কারনে কোন ইফেক্ট পড়ছে কি না, এটা যাচাইবাছাই করে একটা রিপোর্ট দেবে ঢাকা ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ দল। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব। এটা দুইদিন আগে এলাকাবাসীর সাথে মিটিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে তাদেরও একটা চাহিদা ছিল যে নিরপেক্ষ একটা দল দিয়ে যাচাই করেন যে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কি না। 

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে চিঠি দিয়েছি, তারা এক বছর সময় চেয়েছে। এ বিষয়টি গ্রামবাসীদের জানালে তারা সময় দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। আমাদের মন্তব্য হচ্ছে এত দূরে কম্পনের কোন সুযোগ নেই। এছাড়া এমডির ক্ষমতা নেই কাউকে ক্ষতি পূরন দেয়ার। বোর্ড থেকে এটা পাশ করাতে হয়। বিষয়টি বোর্ডে যখন নিয়ে যাবো তখন তারা বলবে কিসের ভিত্তিতে এটা নির্ধারণ করলেন? বর্তমানে কর্মকর্তা কর্মচারীরা খনি থেকে বের হতে পারছে কি  না- এমন পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুটো গেটই বন্ধ ছিল। পশ্চিম দিকের গেইটটি তারা অবস্থা করছে। পরে দক্ষিণ দিকের গেটটি পুলিশের সহযোগিতায় খুলেছি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে