টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চলন্ত বাসে সংঘটিত ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ঘটনার তিন দিন পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ওমর আলী বাদী হয়ে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে মির্জাপুর থানায় মামলাটি করেন। মির্জাপুর থানার কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল বাসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের ‘আমরি ট্রাভেলস’ নামের একটি বাস যাত্রা শুরু করে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতরা বাসের যাত্রীদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করে এবং দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়।
ডাকাতরা ভোর ৩টা ৫২ মিনিটের দিকে বাসটি পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে নেমে যায়। এ সময় বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার নানা অজুহাত দেখিয়ে যাত্রীদের বিভ্রান্ত করতে থাকেন। প্রথমে তাঁরা দাবি করেন, বাসে জ্বালানি নেই, ফলে বাস চালানো সম্ভব নয়। পরে যাত্রীদের চাপের মুখে পড়ে বাসটি পুনরায় গন্তব্যের দিকে চালিয়ে নিয়ে যান।
ডাকাতির শিকার হওয়া যাত্রীরা প্রথমে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত না থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অবশেষে শুক্রবার ভোরে ওমর আলী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হলেও এজাহার তাঁকে পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি শুধু তাঁর জবানবন্দি দিয়েছেন, যেখানে ডাকাতির পুরো ঘটনা ও দুই নারীর শ্লীলতাহানির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে বাসের সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩), চালক বাবলু আলী (৩০) ও তাঁর সহকারী মাহবুব আলম (২৮) থানায় উপস্থিত হন। তবে মামলার বাদী ওমর আলী অভিযোগ করেছেন যে, এঁরা আসামি হয়েও থানায় বসে রয়েছেন, যা সন্দেহজনক।
এদিকে, বড়াইগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চালানমূলে তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু আদালত শুনানির পর তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে মুক্তি দেয়।
এ ঘটনায় মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে কর্তব্যরত এসআই খায়রুল বাসার নিশ্চিত করেছেন যে, মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও তিনি স্বীকার করেন যে, এজাহারের সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁর জানা নেই।
চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের এই ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ন্যায়বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।