চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সংবাদ সম্মেলন

এফএনএস (এইচ এম শহীদুল ইসলাম, সিলেট) : | প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম
চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সংবাদ সম্মেলন

ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্পকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজদের লুটপাটের একটি প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করেছেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ। তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থবিরোধী এ প্রকল্পটি মূলত ক্ষমতাসীনদের অবৈধ অর্থ লুটপাটের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সিলেট নগরের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে অবিলম্বে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধের আহ্বান জানান গ্রুপের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। ২০ বছরের ব্যবসা হুমকির মুখে লিখিত বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, "দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আমরা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করে আসছি। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগের ফলে ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।" তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনকে দেশের ২৪তম স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এই স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হলেও পরিকল্পনাহীনভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারতের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশ অংশে স্থলবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলছে।

বৈধ ব্যবসা উচ্ছেদ, কোটি টাকার ক্ষতি: তিনি বলেন, "এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় আগে কয়েকশ ব্যবসায়ীর কার্যালয় ও পাথর ডাম্পিং এলাকা ছিল। কিন্তু কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের অফিস ও ডাম্পিং স্টেশন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে জোরপূর্বক পানি ছড়িয়ে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার পাথর মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়, যা বিক্রির অযোগ্য হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।"

দুর্নীতির অভিযোগ:

নজরুল ইসলাম বলেন, "ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। প্রকল্পের মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করা হয়েছে। এছাড়া, বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যেভাবে তামাবিল ও ডাউকি স্থলবন্দরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ভোলাগঞ্জে সেভাবে কাজ করা হয়নি। ফলে প্রকল্পটি শুধুমাত্র দুর্নীতির স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে।"

পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা:

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে ভোলাগঞ্জ বাজার, গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী পাডুয়া এলাকায় ডাম্পিং স্টেশন ও অফিস স্থাপন করেছেন। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিকভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি, আবাসিক এলাকায় ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করায় স্থানীয় জনগণের জন্য পরিবেশগত ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দাবি ও হুঁশিয়ারি:

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দাবি করেন, "অবিলম্বে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায়, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।" সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন, কোষাধক্ষ আব্দুস সালাম বাবুল, সদস্য নোমান আহমদ ও ফখরুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে