প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে ৯ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, "আমরা চারটি এসএসবি (সিনিয়র সচিব বোর্ড) মিটিংয়ে ১২ জন সচিব চূড়ান্ত করেছি। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই ও কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নির্বাচন করা হয়েছে। এবার যারা সচিব হচ্ছেন, তারা অধিকাংশই যোগ্য এবং চাকরির নিয়মিত ধারার কর্মকর্তারা। কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।"
বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য। নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সচিবদের এসব ফাঁকা পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আরও জানান, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "যারা প্রকৃত অপরাধ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন ও তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সরকার কারো বিরুদ্ধে অন্যায় বা পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে না।"
সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান আরও জানান, ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য উপদেষ্টা কমিটি কাজ করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার তাদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, "রাষ্ট্রের স্বার্থে যা প্রয়োজন, সরকার শুধু সেই সিদ্ধান্তই নেবে।"
এই পদোন্নতি সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যোগ্য কর্মকর্তাদের সচিব পদে বসানোর ফলে প্রশাসনের কাজের গতিশীলতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও প্রশাসনিক পরিবর্তন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামোর দৃঢ়তা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।