উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন “ইসকন” কর্তৃক রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ড, মুসলিম আইনজীবীকে দিবালোকে হত্যা, মসজিদ ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং ইসকনের সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম খুলনা জেলা শাখা। বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইয়াহ ইয়া। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে, ছাত্র জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে বহুবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে দিতে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আরও বলা হয়, আগামী ১৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুপুর ২ টায়, খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে ইসকন সম্মেলন করতে চাচ্ছে। যে সার্কিট হাউস ময়দান আমাদের খুলনাবাসীর নামাজের স্থান। যেখানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেই মাঠে ইসকন নামক উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন সম্মেলন করবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদেরকে কোনোভাবে-ই খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে সম্মেলন করতে দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসন যদি তাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় এবং এর ফলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে এর সব দায়ভার প্রশাসনকেই বহন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের মিথ্যা বানোয়াট প্রোপাগান্ডা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা অবান্তর প্রোপাগান্ডা ও অতিরঞ্জিত ভুল তথ্য প্রচার করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে ভারতীয় সরকারের উচিত দ্রুত তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে আমরা বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে অধিক সংযম ও দায়িত্বশীল বক্তব্য ও মন্তব্য আশা করছি। অবিলম্বে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিভ্রান্তমূলক ও অসত্য মন্তব্য এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সব ধরণের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। আরও বলা হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ ও আদর্শিকভাবে ভিন্ন মতালম্বীদের দমন নিপীড়নে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের নানান অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ জাতীয় তৎপরতার এখনই পরিসমাপ্তি কামনা করছি। দুই দেশের মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র যদি অব্যাহত থাকলে তা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এ বিষয়ে ভারতীয় সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। যাতে পরবর্তীতে মসৃণ ও ইতিবাচকভাবে দুই দেশের স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক সাবলীলভাবে বজায় থাকে। সংবাদ সম্মেলন চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হল- উগ্র সংগঠন ইসকনের সকল কার্যক্রমা অবিলম্বে নিষিদ্ধ, অ্যাডভোকেট শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাসহ ইসকন কর্তৃক সংগঠিত সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত, আগামী ১৩ ডিসেম্বর খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে ইসকনের সম্মেলন বন্ধ এবং ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা প্রচার বন্ধ না করলে ভারতীয় সকল চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশ থেকে বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের জেলা সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ, সেক্রেটারি মুফতী গোলামুর রহমান, মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী প্রমুখ।