বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ফ্যাটি লিভার একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগটি প্রাথমিকভাবে নির্দোষ মনে হলেও, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এটি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক জটিলতায় রূপ নিতে পারে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে রয়েছে। একজন ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি, কীভাবে এই রোগটি নীরবে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গাজীপুরের সেতারা বেগম তিন মাস ধরে পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে মলের সঙ্গে রক্ত দেখার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তিনি জানতে পারেন, তিনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। তার অবস্থা উন্নতির জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, শহরাঞ্চলের পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলেও ফ্যাটি লিভারের প্রকোপ বাড়ছে। এই রোগ থেকে লিভার সিরোসিস হলে ১৫ শতাংশ রোগী সাত বছরের মধ্যে এবং ২৫ শতাংশ রোগী ১০ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা (এনএইচএস) বলছে, যকৃতের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি চর্বি জমলে সেটি ফ্যাটি লিভার হিসেবে চিহ্নিত হয়। বিশেষ করে যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, যারা বেশি ভাত ও তৈলাক্ত খাবার খান, এবং যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, তাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি। টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েডজনিত সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিরাও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। সম্প্রতি শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় ২৩ শতাংশ নারী ও ২০ শতাংশ পুরুষের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের উপস্থিতি রয়েছে। শহর এলাকায় এই হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালের প্রধান পুষ্টিবিদ মাহফুজা আফরোজ সাথীর মতে, কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার কমিয়ে আঁশযুক্ত ও এন্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। ভাত, চিনি ও তৈলাক্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে শাকসবজি, ফলমূল ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা গেলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।