চাঁদপুর - শরিয়তপুর- ঢাকা নৌরুটে ডুবোচর

নৌ-যান চলাচল ব্যাহত হবার শঙ্কা

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) : | প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম
নৌ-যান চলাচল ব্যাহত হবার শঙ্কা

চাঁদপুরের দক্ষিণে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী থেকে চাঁদপুর সদর ঈদগাহ ফেরিঘাট, রাজরাজেশ্বর চরসহ মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার এলাকা নৌ-সীমানা। এ সীমানার পদ্মা-মেঘনার চ্যানেল দিয়ে চাঁদপুর - শরিয়তপুর,চাঁদপুর-ঢাকা -নারায়নগঞ্জ রুটে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়াও এ রুটে সবচেয়ে বড় যাত্রী বাহী নৌযান হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের শতাধিক লঞ্চ। আরো আছে অসংখ্য যাত্রী ও মালবাহী ট্রলার কার্গো নিয়মিত চলাচল করছে।  এদিকে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের  কাছে দিন দিন এ নৌরুট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে বর্তমানে যাত্রীরা সবচেয়ে আরাম দায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করায় সাধারণত চাঁদপুরের নৌপথ এখন বিশেষ করে পাশ্ববর্তী জেলা লক্ষীপুর, নোয়াখালী এলাকার যাত্রীদের কাছে এবং জেলার অন্যান্য উপজেলার যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এ রুটে বর্তমানে নৌপথের যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিন্তু চাঁদপুর -ঢাকা রুটে নৌ-সীমানায় প্রতিবছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে প্রায়ই যাত্রীবাহী লঞ্চ, লাইটার জাহাজ ও মালবাহী ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান জেগে ওঠা ডুবোচরে আটকা পড়ে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এ সমস্যা অব্যাহত থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এদিকে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৩৫টির বেশি চর। শীত এলেই চরের মধ্যে লঞ্চগুলো আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অথচ অপরিকল্পিতভাবে বিগত সময়ে চাঁদপুরের এসব বিঘ্ন সৃষ্টিকারী চরের বালি উত্তোলন না করে ডিজাইনবহির্ভূত স্থান থেকে নদীর বালি উত্তোলন করায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিক পক্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিনিধিবলেন, নৌরুটগুলোতে নাব্য সংকট হলে সাধারণত লঞ্চের মাস্টার ও জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেন বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সওজ বিভাগকে অবহিত করেন। তারাই সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এদিকে নদীতে বর্তমানে এত বাল্কহেড চলছে যে এই বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রায়ই বাতিসহ এর যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। দূর্ঘটনা ঘটছে। ডুবোচরের কারণে প্রায় দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে লঞ্চ ও যাত্রীরা

চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে বহু যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। মতলবের ষাটনল থেকে আনন্দ বাজার, চাঁদপুর-হিজলা, চাঁদপুর-নন্দিরবাজার, চাঁদপুর-মাদারীপুর, চাঁদপুর- শরীয়তপুর, চাঁদপুর - মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর-মাওয়াসহ বেশকিছু ছোট-ছোট শাখা নদী রয়েছে এই নৌপথে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে অনেক সময় চরে লঞ্চ আটকা পড়ে। এ বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে নদীর নাব্যতা রক্ষা করা জরুরি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে পরিকল্পিত ভাবে নদীর ড্রেজিং প্রয়োজন। এ অবস্থায় নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে নদীর পাড়ের জনগণ।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক বলেন, মেঘনা নদী একসময় ইলিশের জন্য বিখ্যাত থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ডুবোচর বা নদীর নাভ্যতা না থাকায় , এ নদীতে ইলিশ প্রজনন মৌশমে মা ইলিশ এ নদীতে প্রবেশ করছে না। ফলে বর্তমানে মেঘনায় ইলিশ সংকট প্রকট আকারে ধারণ করছে। তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র ডুবোচরের জন্য নদী খনন বা ড্রেজিং প্রয়োজন তা নয়, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে পরিকল্পিত মধ্য দিয়ে নদীর নাব্রতা রক্ষায় ড্রেজিং জরুরী প্রয়োজন। এই বিষয়ে আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এ বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।। ফলে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়ছে।

বি আই ডব্লিউ টি এ চাঁদপুর অফিসের নৌপথ সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার একলাশপুর মোহনপুর এলাকায় বেশ কিছু ডুবুচর রয়েছে। মেঘনা নদীর নৌ রুটে আরো কিছু ডুবুচর রয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করে এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে নদী পথ সংরক্ষণ কতৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। বাংলাদেশ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের যুগ্ন পরিচালক শরীফ আহাম্মদ মাহফুজ উল আলম মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চাঁদপুর ঢাকা নৌরুটের নদীর নাব্যতা রক্ষায় এবং এবং ডুবুচর গুলোর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা গত সপ্তাহে চাঁদপুর থেকে একটি চিঠি পাঠিয়েছি আশা রাখি শীঘ্রই কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে