চলতি মাসের শরুতে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ও নীতি সুদ হার অপরিবর্তিত রাখা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে? সম্প্রতি ডিসিসিআই আয়োজিত বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা শীর্ষক বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক হারে কমেছে। উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ঋণের সুদহার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। সেমিনারে তিনি বলেছেন, উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত করা, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনা এবং ঋণের সুদহার হ্রাস অপরিহার্য। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। অনেক সময় বিনিয়োগকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে ধরা হয়। বিনিয়োগ ব্যক্তি খাতে যেমন হতে পারে, তেমনি হয় রাষ্ট্রীয় খাতে। যেকোনো দেশে ব্যক্তি বা বেসরকারি বিনিয়োগ বড় একটা দিক। সামপ্রতিক বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলসি খোলার হার কমেছে ৭ শতাংশ আর উৎপাদন কমেছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ঋণের সুদহার বাড়ানোতে চরম সংকটে পড়েছে বেসরকারি খাত। ফলে ব্যবসার প্রসারসহ থমকে রয়েছে বিনিয়োগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের মুদ্রানীতিতে একদিকে যেমন উচ্চ নীতি সুদ হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি অর্থনীতিতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করা হয়নি। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ সেভাবে উৎসাহিত হবে না। ব্যবসায়ীদের জন্য নিশ্চয়ই এটি ভালো সংবাদ নয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে বিরাজমান অনিশ্চয়তার সময় বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ থাকে না। তবে বৃহৎ আকৃতির বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা না গেলেও ব্যবসার অগ্রগতি বজায় রাখার স্বার্থে স্বাভাবিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যদি স্বাভাবিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত না থাকে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই স্থবিরতা নেমে আসবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে না, বেকারত্ব বেড়ে যেতে পারে, দ্রব্যমূল্যও বেড়ে যেতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে। এমনকি দেশে মন্দা অবস্থাও দেখা দিতে পারে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো নয়। দেশের অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ—সব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঋণের সুদহার কমিয়ে উদ্যোক্তাদের আস্থা ফেরাতে হবে।