রাজপথে থাকতে চাই: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম | প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
রাজপথে থাকতে চাই: নাহিদ ইসলাম

সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে থাকার প্রয়োজনীয়তা বেশি—এই বিশ্বাস থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমি মনে করি, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের ভেতরে থেকে পরিবর্তন আনার চেয়ে রাজপথে থেকে জনগণের দাবির প্রতি সাড়া দেওয়া জরুরি। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমি রাজপথে থাকতে চাই।”

৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময় জাতীয় নিরাপত্তা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এটি একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ ছিল বলে মনে করেন নাহিদ। তিনি বলেন, “গত সাড়ে ছয় মাসে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি। হয়তো আশানুরূপ ফলাফল আসেনি, কিন্তু সরকারে স্থিতিশীলতা এসেছে।”

তবে নাহিদের মতে, গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সরকারের বাইরে থেকে ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। “বাইরে আমাদের সহযোগী যারা আছেন, তারাও চান আমি রাজপথে থাকি,” বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর থেকেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জন আরও জোরদার হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন নাহিদ ইসলাম। দলটি গঠন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

নাহিদের পদত্যাগের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন শক্তির উত্থান ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে এই দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়। তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যেখানে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকার বনশ্রীর বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।

নাহিদের পদত্যাগের ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তিনি যে প্রভাব বিস্তার করেছেন, তা তার নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। তবে এই দল কতটা সফল হবে, সেটি নির্ভর করবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল ও জনসমর্থনের ওপর।

রাজনীতিতে নতুন শক্তির উত্থান কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নাহিদ ইসলামের এই সিদ্ধান্ত যে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে