আপনার মা-কন্যা কিংবা বোন-স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করলো। বিচার হিসেবে ধর্ষকের ফাঁসি কিংবা লাখ টাকা জরিমানা। মায়ের ছেলে হিসেবে, কন্যার বাবা হিসেবে, বোনের ভাই হিসেবে কিংবা স্ত্রীর স্বামী হিসেবে দুয়ের মধ্যে কোন দণ্ডটি গ্রহণ করবেন? শতভাগ পুরুষ কোটি টাকার প্রলোভন ভুলে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চাইবে। এখানে ধর্ষকদের ক্ষমা করা, মানবিকতা দেখানো কিংবা এই অপরাধকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নাই। ধর্ষকদের প্রতি করুণা করার প্রশ্নই আসে না বরং সর্বদা ঘৃণা করতে হবে। সবাই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইবে। অ্যাকজ্যাক্টলি! ইসলাম ধর্ষকদের পাথর মেরে হত্যা কিংবা প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে। ন্যায় বিচার ও জনকল্যাণমুখী বিচারের প্রশ্নে ইসলামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
ধর্ষণের খবর পছন্দ করে এমন পাষণ্ডের খোঁজ পাওয়া যাবে না। ধর্ষকদেরকে যদি প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া হতো তবে মা-বোনদের নিরাপত্তা নিয়ে সমাজকে শঙ্কিত থাকতে হতো না। আমার কন্যা, আপনার বোন বাড়ির বাইরে থাকলেও দুশ্চিন্তায় কাটাতে হতো না। ব্যভিচারের ইসলামিক দণ্ড যদি কায়েম থাকতো তবে সংসারে অশান্তির প্রশ্ন থাকতো না। বিচ্ছেদ কিংবা কলহের আগুনে মানুষকে পুড়তে হতো না। আমরা আমাদের সুবিধামতো ক্ষেত্রে ইসলামকে ব্যবহার করছি বলে ইসলামের অনেক সৌন্দর্য গোপনীয় থেকে যাচ্ছে। আমার বোন ধর্ষিতা হবে আর আমি প্রতিশোধ নেবো না- এমন ধ্বজাধারী সভ্য যাতে কোনোদিন না হই। ইসলামের দণ্ড বিধান মানলে আমি ধর্ষক হতে পারি না, শিরশ্ছেদ সবার আগে আমার হয়- এর জন্যই সবার আগে আমিই ধর্মীয় শাস্তির বিধিবিধানের বিরোধিতা করি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় উচ্চমহলে অনেকটা সেটাই হচ্ছে!
সংবাদে দেখলাম, এক ভাই স্ত্রীর ধর্ষককে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে- আইন আদালত তাকে দুষবে হয়ত। তবে এই জাতীয় অপরাধের ক্ষেত্রে অতীতে অনেকেই ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার জন্যই এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাষ্ট্রের ওপর আস্থাশীলতার ক্ষেত্রটি নড়বড়ে হয়েছে। সোনার ছেলেদের ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব হয়েছে! ধর্ষিতা কন্যার পক্ষে ন্যায়বিচার চাইতে গিয়ে বাবাকে অপমান-অপদস্থ হতে হয়েছে। মেয়ে ধর্ষিতা হয়েছে, আবার ধর্ষকদের হুমকি-ধামকি সামলাতে না পেরে পুরো পরিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে কোথাও কোথাও সাংঘাতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বরং ধর্ষিতা তার সাথে ঘটে যাও পাশবিকতার বিচার চাইতে গিয়ে বারবার হেনস্তা হয়েছে। ধর্ষক একবার ধর্ষণ করে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু সমাজ-আইন-আদালত নিয়মের শৃঙ্খলে তাকে ধর্ষণ করেছে বারবার! অন্তত ধর্ষকদের শাস্তির জন্য ইসলামিক হদ বিধান কায়েম করা জরুরি। যদি বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে একহালি ধর্ষকের শিরশ্ছেদ করা হয় তবে দেশের ধর্ষণ পরিসংখ্যান শূন্যমুখী হবে।
সম্প্রতি আলেপের কাণ্ড শুনে হতবাক হয়েছি। রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ! স্বামীকে বাঁচানোর বদৌলতে ধর্ষক যা চেয়েছে, যেভাবে চেয়েছে নারী সেভাবে বাধ্য হয়েছে। তখন এর বিকল্প সেই নারীর কাছে আর কী উপায় ছিল? যারা ধর্ষকদেরকে গ্রেফতার করে, স্বীকারোক্তি আদায় করে তাদের মধ্যের কারো এই যদি হয় চরিত্র তবে মানুষ যাবে কোথায়? বিশ্বাস করবে কাকে? নারীর নিরাপত্তা কোথায়? এই দেশে এতো অমানুষের দরকার নাই। কয়েকশো ধর্ষককের জীবন গেলে এই ভূখণ্ডের নারী-শিশু নিরাপদ হবে। আত্মরক্ষার জন্য ধর্ষককে হত্যার বৈধতা থাকা উচিত। পৃথিবীর বুকে যত বর্বরোচিত অপরাধ তার মধ্যে ধর্ষণ অন্যতম। শুধু ধর্ষণ নয় বরং মূল্যবোধ সংরক্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তিও কঠোর থেকে কঠোরতার হওয়া উচিত। মানবতার মুক্তির জন্য এর বিকল্প ভাবনার উপায় নাই। খবরের কাগজে আর লাল কালির অক্ষরে ধর্ষণের কোন দুঃসংবাদ পড়তে চাই না। ধর্ষিতা হয়ে কোন নারী আত্মহত্যা করেছে- দেশের কোন প্রান্ত থেকে এমন সংবাদ যাতে আর না আসে।
আমার মেয়ে, আমাদের বোন নিরাপদ না থাকলে পুরুষ হিসেবে আমাদের অবস্থান ও আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমরা ঘরের মা-বোনকে মুখ দেখাই কোন মুখে? যেকোনো মূল্যে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা পাশবিক মানসিকতার ধারক তাদের বিচারে নমনীয়তা প্রদর্শন মানে অপরাধকে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। দণ্ডের উদ্দেশ্য কেবল সংশোধন নয় বরং প্রতিরোধও দণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। ধর্ষককে সমাজে মুক্ত রেখে, জেলে বাঁচিয়ে রেখে ভবিষ্যতে তাকে সাধু বানিয়ে সমাজের মঙ্গল করার দরকার নাই। ভণ্ড বোল পাল্টাতে পারে কিন্তু চরিত্র পাল্টায় না। মানুষের চেয়ে মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গল কীসে- সেটা স্রষ্টা অধিক ভালো জানেন। ইসলামের শাস্তিবিধান মানবতার জন্য মঙ্গলজনক- বহুক্ষেত্রে এটা প্রমাণিত। ধর্ষককে ধর্মীয় বিচারের আওতায় সোপর্দ করতেই হবে। একটা সমাজ পরিবর্তনের জন্য নারীর নিরাপত্তা ম্যান্ডেটরি। কাজেই ধর্ষণ ও ধর্ষকদের সাধারণ চোখ দিয়ে দেখার সুযোগ নাই। সামাজিকভাবে ধর্ষকদের বয়কট করতে হবে। তাদের দিকে এমনভাবে দৃষ্টি ফেলতে হবে যাতে তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়। সমাজে অপরাধীদের বেঁচে থাকা বিষিয়ে তুলতে হবে।
লেখক : রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক