আমাদের সমাজে নারীদের নিরাপত্তা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে গণপরিবহনে। প্রতিদিন লক্ষাধিক নারী বাস, ট্রেন, অটোরিকশা এবং অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। কিন্তু, তাদের নিরাপত্তা প্রায়শই হুমকির মুখে থাকে। নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নিগ্রহ এবং অশোভন আচরণ প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং আমাদের সমাজের জন্য লজ্জার। ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণহীন এবং জনপরিসরে নারীদের নিরাপত্তা যে ঝুঁকিপূর্ণÑএ ঘটনা তারই একটি উদাহরণ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নারীরা পাশবিক নির্যাতন কিংবা যৌন হয়রানির শিকার হলে, তাদের জীবন ভীষণ হুমকির মুখে পড়ে। তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করা সহজ হয় না। আবার নির্যাতনের শিকার নারীদের অনেক সময় সমাজ ও পরিবার থেকেও কটু কথা শুনতে হয়। যা তাদের মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে দেয়। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবার সমাজ থেকে কোনো সহযোগিতা পায় না। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে পড়তে এক সময় আত্মহত্যা করেন অনেক নির্যাতিত নারী। অথচ নির্যাতনকারীর সঠিক সাজা হওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯৭৫ জন নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। যৌন নির্যাতনের শিকার হন আরও ১৬১ জন। এই ধরনের পরিসংখ্যানগুলো বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশে নারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। আরও সহজ করে বললে, আমাদের সমাজ এখনও নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সিট বরাদ্দ করা উচিত, বিশেষ করে নারীদের জন্য। ট্রেনে নারীদের জন্য আলাদা সিট এবং বগি থাকা উচিত, যাতে তারা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন। গণপরিবহনে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং অন্যান্য সুরক্ষাব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত প্রতিরোধ করা যায়। এ ছাড়া, যাত্রীদের প্রতি শিষ্টাচারের শিক্ষা এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট হেল্পলাইন চালু করা যেতে পারে। সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি, যাতে নারীরা গণপরিবহনে নিরাপদে চলাচল করতে পারে।