বাংলাদেশে কর্মরত দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জন্য নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। ‘প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২৫’ নামে এই নীতিমালায় সাংবাদিকদের প্রেস কার্ড ইস্যু, নবায়ন ও বাতিলের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করে এই নীতিমালা কার্যকর করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পেতে আবেদনকারীর ন্যূনতম পাঁচ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কার্ডের মেয়াদ হবে তিন বছর। আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়োজিত কর্মকর্তার সুপারিশসহ আবেদন করতে হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি বছর ৭ জানুয়ারি ও ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সাংবাদিকদের হালনাগাদ তালিকা তথ্য অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, উপসম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক, প্রতিবেদক, আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারদের মোট সংখ্যার আনুপাতিক হারে কার্ড দেওয়া হবে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে ১৫টির বেশি কার্ড পাবে না এবং কার্ডের সংখ্যা মোট সাংবাদিকের ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করলে পূর্বের কার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে এবং নতুন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবেদন করতে হবে।
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের জন্য আলাদা শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ সম্পাদক, বরেণ্য সাংবাদিক বা কলামিস্টরা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে প্রেস কার্ড পেতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমে কমপক্ষে ২০ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা এবং বছরে অন্তত ১০টি প্রতিবেদন প্রকাশের প্রমাণ দাখিল করতে হবে। প্রতিবেদনগুলো প্রধান তথ্য অফিসার যাচাই করে কমিটিতে উপস্থাপন করবেন।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিক যদি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন বা বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ‘কোড অব কনডাক্ট’ লঙ্ঘন করেন, তাহলে তার কার্ড বাতিল করা হবে। কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে কার্ড স্থগিত থাকবে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তা বাতিল করা হবে। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হলে পুনরায় আবেদন করা যাবে। কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে আপিল কমিটিতে আপিল করা যাবে এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি মিডিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রথমবারের মতো প্রেস কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল প্রত্যয়ন ও নিয়োগপত্র জমা দিতে হবে। নিয়োগপত্র নিয়োগকারীর অফিসিয়াল ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কার্ড নবায়নের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হবে।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হারিয়ে গেলে নিকটবর্তী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এর অনুলিপি সংযুক্ত করে পুনরায় আবেদন করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার এক মাসের মধ্যে কার্ড তথ্য অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। সময়ের ব্যত্যয় হলে কার্ড নবায়ন বা ইস্যু করা হবে না।
কোনো আবেদনকারী বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান যদি প্রতারণামূলক বা জাল তথ্য বা প্রমাণ সরবরাহ করে, তাহলে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্ড প্রাপ্তির অযোগ্য বিবেচিত হবে। এ ছাড়া, কার্ডের অপব্যবহার করলে কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
নতুন নীতিমালায় প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ডিজিটাল করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মসূচির নিউজ কভারেজ বা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আগত বিদেশি সাংবাদিকদের সাময়িকভাবে প্রেস কার্ড দেওয়া যাবে। তবে দায়িত্ব শেষে সাত দিনের মধ্যে কার্ড ফেরত দিতে হবে।
এই নীতিমালা সাংবাদিকদের পেশাগত স্বীকৃতি ও দায়িত্ববোধকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন নিয়মাবলী অনুসরণ করে সাংবাদিকরা তাদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পেতে পারবেন এবং তা নবায়ন করতে পারবেন। তবে নিয়ম লঙ্ঘন বা অপব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান রাখা হয়েছে।