ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ১৩দিন পর প্রসূতি মা সাবিহা বেগম (২০) মারা গেছেন। আর এ দুইটি জীবনের বিনিময়ে সাবিহার স্বামী এক লাখ নিয়েই সটকে পরেছেন। এমনকি মৃত্যুর খবর পেয়েও তিনি তার স্ত্রীকে দাফন করতে আসেননি। একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই টাকা দিয়েই স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে পুরো ঘটনা ধামাচাঁপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার বেজগাতি এলাকার বেসরকারি সুইজ হাসপাতালের। শুক্রবার সকালে কালকিনি উপজেলার উত্তর রমজানপুর গ্রামের আবুল কালাম সরদার অভিযোগ করেন, সুইজ হাসপাতালের দুইজন নার্স জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে নরমাল ডেলিভারী করানোর সময় নবজাতক মারা যাওয়ার ১৩দিন পর গত ৪ ডিসেম্বর তার মেয়ে সাবিহা বেগম (২০) মৃত্যুবরণ করেছে। পুরো ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে আপোষ মীমাংসা করেছেন। যার এক লাখ টাকা মৃত সাবিহার স্বামী নিয়ে সটকে পরলেও বাকি এক লাখ টাকা মধ্যস্থভোগীরা আত্মসাত করেছেন। তিনি আরও জানান, সাবিহা বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে গত ২১ নভেম্বর দিবাগত রাতে সুইজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে সাবিহার প্রসব বেদনা তীব্র হওয়ায় ডাক্তার ডাকা সত্বেও কোন ডাক্তার আসেননি। পরে রাত তিনটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্স জেসমিন আক্তার ও লিমা আক্তারের মাধ্যমে জোরপূর্বক সাবিহার নরমাল ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করে। এতে সাবিহার গর্ভে একটি মৃত পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। নবজাতক প্রসবের সময় নার্সরা সাবিহার প্রসাব ও পায়খানার রাস্তা কেটে ফেলায় রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আবুল কালাম সরদার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিষয়টি ধামাচাঁপা দিতে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার বড় মেয়ে জামাতা মেহেদী আকন ও সাবিহার স্বামী সবুজ মোল্লার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে আপোষ মীমাংসার কাগজে স্বাক্ষর গ্রহণ করে সাবিহাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়। এরপর থেকে সাবিহার স্বামী সবুজ মোল্লার কোন খোঁজ না পেয়ে তিনি (কালাম সরদার) তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে আনার পর সাবিহা গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পরলে প্রথমে তাকে গৌরনদীর গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় চিকিৎসা করানোর পরেও কোন উন্নতী না হওয়ায় মুমূর্ষ অবস্থায় গত ৩ ডিসেম্বর সাবিহাকে বাড়িতে আনার পর ৪ ডিসেম্বর সকালে সাবিহা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আরও জানান, চিকিৎসা অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ এনে গৌরনদী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মৃত সাবিহা বেগমের বড় বোন জামাতা মেহেদী আকন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমি এক লাখ টাকা এনে সাবিহার স্বামী সবুজ মোল্লাকে দিয়েছি। সূত্রমতে, সবুজ মোল্লা এক লাখ টাকা নেয়ার পর অসুস্থ্য সাবিহার চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখেননি। এমনকি সবুজ ও তার পরিবারের সদস্যরা সাবিহার মৃত্যুর পর দাফন করতেও আসেননি। এ ব্যাপারে সবুজ ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি সবুজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তবে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে সুইজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডিএমএফ (গ্রাম্য চিকিৎসক) সঞ্জীব মজুমদার বলেন, হাসপাতলে কোন এমবিবিএস ডাক্তার নেই। রিতা নামের একজন ডিপ্লোমা নার্স রয়েছেন। সুইজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রুপা খাতুন বলেন, আপোষ মীমাংসার জন্য কাউকে কোন টাকা দেওয়া হয়নি। তবে মানবিক কারনে হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ নেওয়া হয়নি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি ইউনুস মিয়া বলেন, চিকিৎসা অবহেলা ও গাফলতির অভিযোগ এনে সাবিহার বাবার দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। খোঁজ নিয়ে ভুল চিকিৎসা কিংবা অবহেলার অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।