কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার সর্ব দক্ষিণে সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত লোহাজুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। ক্ষুদ্র ব্যবসা আর কৃষি নির্ভর এই এলাকার আলোকবর্তীকা এই বিদ্যাপিঠ। লেখা পড়ার পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গণে রয়েছে তার বেশ সুনাম। প্রতি বছর শীতকালীন বা আন্তঃ বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাদের সাফল্য ঈর্ষনীয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৫৩তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা দ্রুততম মানব (বালক মধ্যম) হওয়ার গৌরব অর্জন করে অত্র বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনির ছাত্র স্বাধীন মিয়া। তাছাড়া অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীগণ জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে সাতটি এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে ১৫টিতে প্রথম, ৯টিতে দ্বিতীয়সহ মোট ৪৬টি পুরস্কার অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, গত বছর ৫২তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে ৪টিতে এবং উপজেলা পর্যায়ে ৩৩টি পদক অর্জন করে অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রীড়াবিদ শিক্ষার্থীবৃন্দ। যা উপজেলার প্রত্যন্ত ও অবহেলিত এলাকাকে গৌরবান্বিত করেছে। লেখা পড়ায়ও রয়েছে বিদ্যালয়ের বেশ সুনাম। কিন্তু এসব প্রতিভা বেশীদূর এগুতে পারেনা দারিদ্রতার কারণে। স্কুলের গন্ডি পেরোনোর আগেই ঝরে যাচ্ছে এসব প্রতিভাবান খেলোয়ারগণ।
সদ্য সমাপ্ত ৫৩তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ২০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে সকল অঞ্চলকে পিছনে ফেলে দেশ সেরা দ্রুততম মানব হওয়ার গৌরব অর্জন করে স্বাধীন মিয়া। তিনি উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের দরিদ্র কৃষক কাঞ্চন মিয়ার বড় ছেলে এবং লোহাজুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েই জাতীয় পর্যায়ে অংশ গ্রহণ করেন। দৌড় প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ফুটবল খেলায়ও তার বেশ সুনাম রয়েছে।
তাছাড়া নবম শ্রেণির ছাত্র বিল্লাল হোসেন জেলা পর্যায়ে ত্রিপল জাম্পে ১ম ও গোলক নিক্ষেপে ২য় স্থান অর্জিন করেন। ৭ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা আক্তার দীর্ঘ লাফে উপজেলায় চ্যাম্পিয়ান হয়ে জেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। অত্র স্কুলের ক্রিকেট দল উপজেলায় চ্যাম্পিয়ান হয়ে জেলা পর্যায়ে রানার্স আপ হয়।
দশম শ্রেণির ছাত্রী আশা আক্তার ব্যাডমিন্টন (একক) এ উপজেলায় চ্যাম্পিয়ান হয়ে জেলা পর্যায়ে অংশ গ্রহণ করেন।
একই স্কুলের ছাত্রী হ্যাপী আক্তার ২০১১ সনে ৪০তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দীর্ঘ লাফে জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তাছাড়া দীর্ঘ লাফ, দৌড় প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে ১ম স্থান অর্জন করে বহু পুরস্কার লাভ করেন। তিনিও উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় সকল অঞ্চলকে পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই দারিদ্রতার কষাঘাতে ঝরে পরে হ্যাপী আক্তার। জাতীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় সে সময় হ্যাপী আক্তারকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল কাসেম নগদ ৫ হাজার টাকা এবং তার মাকে একটি ভিজিএফ কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়া লেখা চালিয়ে যেতে না পারায় ছয় বছর পূর্বে তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। ঝরে যায় হ্যাপী আক্তার। বর্তমানে স্বামী সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
দরিদ্র কৃষকের সন্তান দেশ সেরা দ্রুততম মানব স্বাধীন মিয়াসহ জেলা ও উপজেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী বিল্লাল হোসেন, মায়শা আক্তার এবং আশা আক্তারও কি জাতীয় প্রতিযোগিতায় গৌরব অর্জনকারী হ্যাপী আক্তারের মত দারিদ্রের কষাঘাতে হারিয়ে যাবে? এ শঙ্কা স্কুলের শিক্ষক অভিভাবক ও এলাকাবাসীর।
দ্রুততম বালক স্বাধীন মিয়া বলেন, ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দৌড়, দীর্ঘ লাফসহ ফুটবল খেলায়ও আমার আগ্রহ রয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে পদক অর্জন করে দেশের জন্য সুনাম কুড়াতে চাই।
লোহাজুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ্ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা এবং সময়োপোযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে এ সকল প্রতিভাধর গ্রামীণ ক্রীড়াবিদ শিক্ষার্থীগণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সরকার বা সংশ্লিষ্ট মহল এগিয়ে আসলে প্রতিভাগুলো একদিন দেশের সম্পদে পরিণত হবে।