‘আঁধার, দুর্যোগ, শান্তিতে, স্বেচ্ছাসেবক সবার আগে’এই স্লোগানকে সামনে রেখে তিনদিনব্যাপী অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠান ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এ ধরণের প্রশিক্ষণ এটাই প্রথম। প্রশিক্ষণ থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগকালের কঠিন সময়ের জন্য শক্তিশালী হওয়ার কলাকৌশল শিখেছে।
প্রশিক্ষণটি ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে; যাতে স্বেচ্ছাসেবকগণ দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এবং দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহায়তায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারী।
বরগুনা জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে তালিকাভূক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধাপে বাছাইয়ের মধ্যদিয়ে এই প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫০জন নারী এবং ৫০জন পুরুষ। করোনা মহামারীর জরুরি সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে জাগোনারী। প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০০’র বেশি স্বেচ্ছাসেবক বেসিক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছে।
প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দক্ষ প্রশিক্ষকগণের সরাসরি তত্বাবধানে দুর্যোগ মোকাবিলার বাস্তবভিত্তিক কলাকৌশলগুলো শিখতে পারবেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডো, স্কাউট ও বিএনসিসির অভিজ্ঞ ট্রেনার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও মানবিক কার্যক্রম বিশেষজ্ঞগণ প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন।
তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সেশনগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অংশগ্রহনকারী স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগ মোকাবেলায় তিনটি পর্যায়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহন করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল উদ্ধার, বেঁচে থাকা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা। উদ্ধার পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাথে উদ্ধারের দক্ষতা অর্জন করেন অংশগ্রহনকারীরা। তারা অপারেশন উদ্ধার বিষয়ে হাতেকলমে শিখতে পেরেছেন। দুর্যোগকালে নিজেদের বাঁচাতে ভেলা প্রস্তুত করার কৌশল শিখতে পেরেছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। যা উদ্ধার এবং পানিতে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। একই সাথে তারা শিখেছেন দড়ির দক্ষতা; যা উদ্ধার ও জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
জাগোনারীর সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোঃ মতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ রোখসানা বেঞ্জু, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু, জাগোনারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, অ্যাডভোকেট রঞ্জু আরা শিপু, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ, , তালতলী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি হাইরাইজ মাঝি, সংস্কৃতি কর্মী মুশফিক আরিফ প্রমুখ। সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারিক বিন আনসারী সুমন।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রনকারীরা বরগুনার তালতলী উপজেলার সমুদ্র এবং পায়রা ও বিশখালী নদীর মোহনায় শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া বনে তাঁবুতে অবস্থান করেছেন। তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্যদিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন।