আমাদের দেশের সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশের যুবসমাজের এক-তৃতীয়াংশ বেকার। যদিও বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে অভিমত অনেকের। এর মধ্যে বড় অংশই যে শিক্ষিত তাও সবার জানা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের বেকার সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, কমনওয়েলথ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ একাধিক সংস্থার সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে ১.৬ শতাংশ যেখানে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশ। গবেষণায় জানা যায়, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএসের হিসেবে বাংলাদেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০৩৫ সালের পরে বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনশক্তির হার কমতে থাকবে। এর বিপরীতে বাড়বে শিশু, বৃদ্ধের মতো নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা। এই বেকার জনশক্তি না পারছে নিজের সুন্দর-সমৃদ্ধ একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে, আর না পারছে দেশের অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখতে। দেশে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে। শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির কম ব্যবহার আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমান সুযোগের অভাব। যে তুলনায় পাস করে বের হয়, সে তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এর ফলে হতাশায় জীবন কাটাচ্ছে। অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। বেকারত্ব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে দেশে সর্বত্র দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। কিন্তু এই শিক্ষিত তরুণরা দেশের বোঝা নয়। এরাই মূলত দেশের সম্পদ। এরপরও দেশে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। সন্তোষজনক চাকরি পাওয়া নিয়ে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। দেশে সরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। বেসরকারি খাত কাঙ্ক্ষিত মানে বাড়ছে না। দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার এখন ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। শিক্ষিতদের মধ্যে ৪৫ শতাংশের বেশি বেকার। বেকারত্বের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সামাল দেয়া তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়। কারণ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যা বছরের পর বছর চেষ্টার ফল। বাংলাদেশে বেকার সমস্যা একক কোনো সমস্যা নয় বরং বহুবিধ সমস্যায় আক্রান্ত। এ সমস্যা ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সদিচ্ছা যেমন জরুরি, তেমনি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বেরও প্রয়োজন। বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ধরনের কাজে উৎসাহী করে তুলতে পারলেই বেকারত্বের বিশাল বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বিশ্বাস।