গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানা ও আবাসিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা যায়, ভোলায় উত্তোলনযোগ্য বিপুল পরিমাণ গ্যাস রয়েছে। সেখানে অলস পড়ে থাকা গ্যাসের সর্বোচ্চ ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ভোলায় প্রস্তাবিত ১৯টি কূপেও বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুত রয়েছে। এ গ্যাস উত্তোলন করার জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অদূরদর্শিতার কারণেই দেশে গ্যাস সংকট এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত সরকারের আমলে দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজমান ছিল। পেট্রোবাংলার যথাযথ পরিকল্পনার অভাব ছিল। একইসঙ্গে বাপেক্স যেসব পরিকল্পনা করেছিল, তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে ছিল বছরের পর বছর। এসব কারণে দেশে দীর্ঘ সময় ধরে জোরালোভাবে গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। নিরবছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও তখন শিল্পের স্বার্থে শিল্পমালিকরা বাড়তি দাম মেনে নিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে বাড়তি দামেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস মিলছে না। সমপ্রতি নানা কারণে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবছিন্ন সরবরাহ না থাকলে উদ্যোক্তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন, যা বলাই বাহুল্য। গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হলে প্রতিটি শিল্প খাতই নানা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। যেমন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এছাড়া আরও নানা সংকট তৈরি হবে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে এ সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারকে দেশীয় শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ত্রুটিহীন রেখে এর দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা দরকার। বস্তুত গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ হবে না। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। পতিত সরকারের আমলে বিশেষজ্ঞদের মতামত গুরুত্ব না দিয়ে জ্বালানি খাতে আমদানিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ খাতে আমদানিনির্ভরতার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের স্থলে ও সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।