বগুড়ায় যমুনার মরুরূপ বাড়ছে

এফএনএস (ইমরান হোসাইন রুবেল; সারিয়াকান্দি, বগুড়া) : : | প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম
বগুড়ায় যমুনার মরুরূপ বাড়ছে

উজানে ভারতের পানি শাসন নীতির প্রভাবে বাংলাদেশের নদীগুলো বহুআগে থেকেই ধুঁকছে। বগুড়া অংশের যমুনা নদী এলাকাও তার বিপরীত নয়। শুকনো মৌসুম এলেই নাব্যতা সংকটে পড়তে হয় যমুনা নদীতে। পানির অভাবে যমুনা নদীর অংশে বিস্তীর্ণ বালুচর মরূরুপ ধারন করেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও নৌকার মাঝিদের তথ্যমতে, এরই মধ্য ১২ টি নদীপথ বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া ডুবোচরের কারণে চলমান নৌ-পথ এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র বলছে, প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে যমুনা নদীর বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ২২০ কিলোমিটার। যমুনা নদীতে দিন দিন নাব্যতা সংকট বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ উজানের দেশগুলোর বাঁধ নির্মাণ। ভারত ও চিনের অভ্যন্তরে অন্তত ১৪ টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর গড় গভীরতা প্রায় সাড়ে ৯ মিটার। কিন্তু বর্তমানে এর গভীরতার পরিমাণ কমে অন্তত ৮ মিটার পাওয়া যাচ্ছে।  

স্থানীয়রা জানান,যমুনা নদীতে এখন ধু-ধু বালুচর জেগেছে। এ বালুময় চর এখন মরুরূপ ধারন করেছে। হাজার হাজার বিঘা জমি পরে আছে অনাবাদি। এসব চরের লোকজন এখনও ফসলাদী করতে না পেরে, হা-হুতাশ করছেন আবাদ ফলনের জন্য কৃষকেরা।

উপজেলার কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের শনপচা চর গ্রামের আইনুদ্দিনের বসতবাড়ি-জমি বহু আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি জানান, যতটুকু জমি আছে, সেগুলোতে চাষ করা অনেক কঠিন। শুকনো মৌসুমে যাতায়াত কষ্টের। আর বর্ষার মৌসুমে তো পানিতে ডুবে থাকে। 

হাটফুলবাড়ির বালুচরা গ্রামের মাঝি ৬০ বছরের আব্দুল মজিদ। মথুরাপাড়ায় তার মূল বাড়ি। দশ বছর আগে নদীভাঙনের কারণে এদিকে পার হয়ে আসেন। মাঝির পেশা ছাড়তে পারেননি তিনি। কিন্তু বছরের কয়েক মাস বেকার হয়ে থাকতে হয়। শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। 

আব্দুল মজিদ বলেন, বর্ষা ছাড়া অন্য সময় কিছু কিছু জায়গায় নৌকা নিয়ে যাই। তাও নৌকার তলা নদীর বালুতে আটকে যায়। এই বয়সে আর অন্য কোনো পেশায় যেতে পারিনি। 

উপজেলার ঘাটগুলোর ইজারাদার, মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রমত্তা যমুনা নদীতে এক সময় জাহাজ চললেও এখন আর সেখানে ডিঙি নৌকা চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার ১১ টি ইউনিয়নের এরইমধ্যে ১২ টি নৌ-পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ১৪১ চর গ্রামের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ করতে নতুন করে দূর্ভোগে পড়েছেন। মাইলের পর মাইল বালু পথ মাড়িয়ে পথ চলতে হচ্ছে। রুগী পরিবহনে দুর্ভোগের শেষ নেই। সময় মতো হাসপাতালে রুগী আনতে না পাড়ায় পথেই মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। গর্ভবতী মহিলারা শহরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি একমাস পূর্ব থেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন। তপ্ত বালুতে পায়ে হেঁটে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন. শুষ্ক মৌসুম এলেই নদী এমন রুপ নেয়।নদী ড্রেজি; করতে হবে । এজন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সারিয়াকান্দির উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, বাঙ্গালী নদীকে খননের আওতায় আনা হয়েছে। তবে যমুনা নদীতে খননের কোনো প্রকল্প নেই সরকারের কাছে। বিগত সময়ে বিআইডব্লিউটিআই যমুনা নদীর কিছু কিছু অংশে খনন সমীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু সেটি ফলপ্রসু হয়নি। কারণ যমুনা নদীতে প্রতি বছর কয়েক টন করে পলি জমা হয়। এ জন্য এখানে খনন করা কার্যকরী হয় না। 

প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা ভাটির দেশ, এখান দিয়ে নদীর পানি গড়িয়ে সাগরে পতিত হবে। কিন্তু উজানের দেশগুলোয় অন্তত ১৩ থেকে ১৪ টি বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। তারা পানি ফিল্টারিং করছে। এতে আমাদের এখানে বর্ষার মৌসুমে প্রচুর বন্যা দেখি। আর শুকনো মৌসুমে ধুধু বালুচর। এসবের প্রভাবে আগামীতে আমাদের এই যমুনা নদী এলাকায় মরুকরণ পরিস্থিতি হবে। যার কিছু কিছু এখন থেকেই দেখা যাচ্ছে। এই মরুকরণ বন্ধে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা ছাড়া উপায় নেই।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে