অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উপস্থিত থাকুন বা না থাকুন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, বিচার অবশ্যই হবে। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে যারা জড়িত, তার পরিবারের সদস্য, তার সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও বিচারের আওতায় আসবেন।
হত্যা ও গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে সরকার ভারতকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠালেও দিল্লি তার উত্তর দেয়নি বলে সাক্ষাৎকারে জানান ইউনূস।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, তা তিনি সশরীরে বাংলাদেশে থাকুন বা না থাকুন। ভারতে থাকলেও তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে।
‘আয়নাঘর’ নিয়ে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,এটা এমন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার, যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, অনুভব করতে পারবেন না বা দেখলেও বিশ্বাস করতে পারবেন না।
স্কাই নিউজ লিখেছে, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধ মতের শত শত কর্মীকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেছেন, তাকে ‘রাজনৈতিকভাবে হয়রানি’ করা হচ্ছে।
সারা দেশে আট শতাধিক গোপন বন্দিশিবির পরিচালনায় যারা জড়িত ছিলেন, শেখ হাসিনার সেই ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
সেসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে সময় লাগছে জানিয়ে ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, এতে সবাই জড়িত ছিল। পুরো সরকারই এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই কারা নিজেদের আগ্রহে এটা করেছে, কারা সরকারের আদেশে এটা করেছে, আর কারা বাধ্য হয়ে করেছেÑ এটা নির্ধারণ করা কঠিন।
শেখ হাসিনার নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যে সহিংস দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তাতে জাতিসংঘের হিসেবে প্রায় ১,৪০০ মানুষের প্রাণ গেছে।
স্কাই নিউজ লিখেছে, আন্দোলনে হতাহতদের পরিবার যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পায়, সেই প্রত্যাশার চাপ রয়েছে অধ্যাপক ইউনূসের ওপর। অন্তর্বর্তী সরকার থাকতে থাকতেই যাতে সেই বিচার করা যায়, সেই চেষ্টা ইউনূস করছেন।
তার ভাষায়, কিছু অপরাধীর বিচার হবে, কিছু বিচারের প্রক্রিয়ায় থাকবে, আর কেউ কেউ হয়ত ধরাছেঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।