বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিদায় এবং সিআর আবরারের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বললেন, আমি জীবনে কোনোদিন এ ধরনের পরিসরে বসবো, এটা কিন্তু কখনোই ভাবা হয়নি। বিভিন্ন সময় আইন-নীতি পরিবর্তন করার বিষয়ে মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বসেছি। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি শ্রম অভিবাসন, শরণার্থী, বাস্তুচ্যুত মানুষ, ক্যাম্পে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী- এ বিষয়গুলো নিয়ে মোটামুটি সক্রিয় নাগরিক হিসেবে কাজ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি, নিয়ম-কানুন মেনে, নৈতিকতা মেইনটেইন করে, জ্ঞাতসারে ক্লাস মিস করিনি। পরীক্ষার খাতা মোটামুটি সময়মতো জমা দিয়েছি। শিক্ষক হিসেবে যেসব প্রশাসনিক দায়িত্ব এসেছে সেগুলো পালনের চেষ্টা করেছি।
সি আর আবরার বলেন, আমি মনে করেছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা আমি পেয়েছি, আমি সবসময় সে বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করেছি। সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমি বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। সমাজ আমাকে দিয়েছে, এখন আমার সময় এসেছে যতটুকু সম্ভব সমাজকে দেওয়ার।
তিনি বলেন, গত চার-পাঁচদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা আমাকে ডেকে পাঠালেন, অন্য অনেক কথার পর উনি যখন বললেন, স্যার (ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ) এ দায়িত্ব আর পালন করতে চাচ্ছেন না। প্রধান উপদেষ্টা বললেন, আমি যেন এ দায়িত্বটা গ্রহণ করি। এতে আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি।আমি বললাম, আমার তো এ ধরনের অভিজ্ঞতা নেই। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বললেন, ইউ কমিট ইয়োরসেলফ, তাহলে তুমি এটা পারবে। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য একটা চমৎকার সুযোগ যে, এ ধরনের আস্থা তিনি আমার ওপরে রাখছেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নতুন উপদেষ্টা বলেন, সমস্যা আছে সমস্যা থাকবে। আমি মনে করি আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের যে গুরু দায়িত্ব সেটা পালন করবো। আমরা জনগণের টাকায় বড় হয়েছি, সে কারণেই তাদের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে। সেই দায়িত্ব আমাদের যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও ইন্টিগ্রিটি নিয়ে পালন করতে হবে। আমি মনে করি শিক্ষা হচ্ছে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন। আমি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার কথা ভাবি, যা হবে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা অর্জন, তার আত্মোন্নয়নের উপযুক্ত পথ; যা হবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উৎকর্ষের সহায়ক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির উপায়।
সি আর আবরার আরও যোগ করে বলেন, আমি এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে এবং বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। তা হয়তো এক বছরে হবে না, পাঁচ বছরে হবে না। কিন্তু এজন্য যে ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া, এজন্য অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি অনেক কিছু আছে। ৮-১০ মাসের মধ্যে এ সরকারের মেয়াদকালীন বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা স্বল্পমেয়াদি বিষয়গুলো চিহ্নিত করবো। সেগুলোর ব্যাপারে কাজ শুরু করবো। দীর্ঘমেয়াদি যে ইস্যুগুলো আছে, এগুলো সমাধান করতে হবে বলে আমরা যদি মনে করি, তবে অংশীজনদের সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করবো।