জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে রাখার দাবিতে জোরালো অবস্থান তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ কথা জানান। এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্থানান্তরের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্দোলনে নেমেছেন।
সিইসি বলেন, “এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে আমি শুনিনি। আলোচনা হয়েছে, কীভাবে এটি হতে পারে, তা নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে সরকারকে জানাব যে, এনআইডি সেবা ইসির অধীনে থাকা উচিত। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এনআইডি ভোটার তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১৭ বছর ধরে ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শ্রম ও ঘাম দিয়ে এনআইডি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। সরকার হয়তো মনে করছে, একটি জায়গা থেকে সার্ভিস দেওয়া হবে। তবে আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের অধীনেই এটি থাকা উচিত। আমরা সরকারের কাছে আমাদের মতামত জোরালোভাবে তুলে ধরব।”
এনআইডি সেবা স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, আমি জানি না। সরকার হয়তো মনে করছে, একটি জায়গা থেকে সার্ভিস দেওয়া হবে। তবে আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের অধীনেই এটি থাকা উচিত।”
এনআইডি সেবা ইসি থেকে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্দোলনে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিইসির কাছে একটি স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। এর আগে এনআইডি সেবা ইসির অধীনে বহাল রাখার দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিইসির কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির কক্ষে গিয়ে তার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, “এনআইডি নিয়ে বারবার একেক সময় একেক রকম সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। তারা এনআইডি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছিল, মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আবার নতুন কমিশন তৈরি করে তাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত ১৭-১৮ বছর ধরে কোনো সমস্যা হয়নি। আজকে এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি, যার কারণে এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও যাবে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সময় দিয়েছি। আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারা দেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন করব। তারপরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, “এনআইডি কার্যক্রম যাতে ইসি থেকে না যায়, সে বিষয়ে কমিশন সব উদ্যোগ নেবে। এনআইডি যদি ইসি থেকে অন্যত্র চলে যায়, তাহলে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে। আমরা উদ্বেগ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। আগের কমিশন আমাদের সঙ্গে ছিল না। বর্তমান কমিশন আমাদের সঙ্গে থাকবে। স্যারেরাও চান, এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকুক।”
সিইসি আরও বলেন, “আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নই, এটা বুঝতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি ইসির পক্ষে কথা বলতে পারি, ইসির পক্ষে সরকারের কাছে অবস্থান তৈরি করতে পারি। এইটুকু আমি জোরালোভাবেই করব।”