বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি, সতর্ক হতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি, সতর্ক হতে হবে

সাম্প্রতিককালে একটির পর একটি স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনের আঘাত ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কোনো পূর্বাভাসের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। গত ১০ দিনে চার দফা ছোট থেকে মাঝারি আকারের যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, প্রায় প্রতিটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশপাশে। ভূমিকম্পে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১,১০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এই ঘটনাটি দুর্বলভাবে নির্মিত ভবনগুলোর সৃষ্ট বিপদের ভয়াবহ উদাহরণ। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, রামপুরা, মতিঝিল ও খিলগাঁওয়ের মতো এলাকার অনেক স্থাপনা কাঠামোগত ও নকশার মান পূরণে ব্যর্থ। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুর চরম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় একটি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় অকল্পনীয় মাত্রার বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসারে উত্তরে তিব্বত সাব-পেস্নট, ইন্ডিয়ান পেস্নট এবং দক্ষিণে বার্মিজ সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে আছে দেশ। উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে মনে করছেন তারা। ভূমিকম্পে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর অঞ্চলই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এবং কাছাকাছি এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১টি এবং গত বছর ২০২৪ সালে দেশে ও আশপাশে ৫৩টি ভূমিকম্প হয়েছে। এটি ছিল আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভূকম্পনের সক্রিয় এলাকায় অবস্থিত। দুর্যোগ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছোটখাটো কম্পন দেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা নির্দেশ করে। ঢাকা থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। ভূমিকম্পে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কম্পন টের পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে দেশে চার বার ভূমিকম্প অনুভূত হলো। ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের কারণে এসব সিসমিক কর্মকাণ্ড ঘটছে, যা স্বাভাবিক হলেও তাতে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ভূমিকম্পের পর নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভূমিকম্প দেশের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ভূমিকম্পের মাত্রা কম হলেও এর পরিণতি হতে পারে বড়, তাই সরকারকে দুর্যোগ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে সবাইকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে।