চাঁদপুর শহরে মধ্যযুগীয় কায়দায় কাজের মেয়েকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ অভিযুক্ত গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করেছে। আপন মামাত বোন শিশু রাজিয়া ও মামাত ভাই প্রতিবন্ধী রিফাতকে দেখাশুনা করার জন্য গত ৬ মাস পূর্বে রুজিনাকে (২০) আনা হয় বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোডে মামা রুবেল মোল্লার বাসায়। কারণে অকারণে ভুল ধরে রুজিনার ওপর অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন চালায় মামি রোকেয়া বেগম। নির্যাতন সইতে না পেরে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে রুজিনা। ঘটনা জানাজনি হওয়ার পর পুলিশ মামা ও মামিকে আটক করে।
৬ মার্চ বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা রোডের জনৈক মহিউদ্দিনের বাড়ী থেকে ভুক্তভোগী রুজিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন দেখতে পায়। পরে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায়।
ওই সড়কের বাসিন্দা শিক্ষার্থী মোরশেদ আলম ও ফরহাদ হোসেন জানান, রুজিনা রাস্তার পাশে কান্না করতে থাকে। তাকে কথায় কথায় নির্যাতন করা হয়, মামার বাসা থেকে সে পালিয়ে এসেছে বলে জানায়। পরে তার অবস্থা দেখে আমরা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে ঘটনাস্থল থেকে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কাউসার রুবেল মোল্লা ও তার স্ত্রী রোকেয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। নির্যাতনের শিকার রুজিনা চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভুঁইয়ার মেয়ে। তার দুই মেয়ে ও তিন ছেলে।
আটক রুবেল মোল্লা একই গ্রামের মোল্লা বাড়ীর আবুল মোল্লার ছেলে। রুজিনা তার আপন ভাগ্নি। রুবেলের বড় ভাগ্নির বাসা থেকে তার শিশু সন্তানকে দেখাশুনা করার জন্য গত ৬ মাস পূর্বে এই বাসায় আনেন। রুবেল মোল্লা ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করেন।
নির্যাতনের শিকার রুজিনা বলেন, গত ৬ মাসপূর্বে সে মামার বাসায় কাজ করার জন্য আনা হয়। কাজ করার সময় কারণে অকারণে তার মামি মারধর করতেন। কোন ভুল হলেই মারধর করতেন এবং গালমন্দ করতেন। কাজ করলে ভুল হতেও পারে। আমাকে পুতা, কাঠ ও দা দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। গত ৪ মাস এইভাবে মারধর করে। মামা কয়েকবার ওষুধ এনে দিয়েছে, কিন্তু জখম ভাল হয় না।
এদিকে ঘটনাটি জেনে থানায় আসেন রুজিনার বাবা আলী আহম্মদ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, আমার মেয়ে এমন নির্যাতনের শিকার আমি জানতাম না। বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বললে পরে নিয়ে আসবো বলতো। রুজিনা ঢাকায় আমার বড় মেয়ের কাছে ছিলো। সেখান থেকে আমাকে না জানিয়ে রুবেলের বাসায় নিয়ে আসে। রোকেয়া আমার মেয়েকে এমন নির্যাতন করেছে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না। এই নিষ্ঠুর মহিলার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবী করি। মেয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে তিনি কান্নায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, খবর পেয়ে গৃহকর্মী মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত দম্পতি কে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।